376 বার পঠিত
আধুনিক প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবন যেমন জীবনকে সহজ করেছে, তেমনি এর প্রভাবে পুরোনো অনেক দৈনন্দিন পণ্য হারিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের শত শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী কিছু পেশা। তেমনই এক পেশা মৃৎশিল্প। মাটির তৈরি জিনিসের চাহিদা কমে যাওয়ায় সদরপুর উপজেলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এ শিল্পটি। এক সময়ের কোলাহলপূর্ণ বাস্ত কুমারপাড়ায় এখন সুনসান নীরবতা। বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করছেন মাটির কারিগররা। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে আগে মুৎশিল্প বিক্রি হতো, বাজারগুলো এখনো জমজমাট থাকলেও উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের পূর্ব শ্যামপুর গ্রামের কুমারবাড়ীর ঐহিত্যবাহী মুৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।
সরেজমিনে গ্রামটি ঘুরে দেখা যায়, গ্রামে প্রায় ২০ থেকে ৩০ টি পরিবার রয়েছে। পাড়ার সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বী। নন্দ পাল, হরেন্দ্র পাল, সুবল পাল এরা কেউ সামনে পুজো উপলক্ষে প্রতিমা ও বিভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরি করছেন। তাদের শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মান অনুন্নত। এখন মাত্র কয়েকটি পরিবারের কারিগরেরা বাপ-দাদার আদি পেশা কোনোমতে আঁকড়ে ধরে আছেন। তাঁদের পেশার দৈন্যদশার সঙ্গে সঙ্গে সংসার জীবনে বিরাট বিপর্যয় নেমে এসেছে। অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্রের দাম বেশি হলেও অধিক টেকসই হয়। এজন্য সেটি বাজার দখল করে নিয়েছে।
বাবা দাদাদের পেশাকে যে গুটি কয়েক জন আঁকড়ে আছেন, তাদের মধ্যে একজন হরেন্দ্র পাল। তিনি জানান, বাবার কাছ থেকেই মৃৎশিল্পের কাজ শিখেছেন। তবে আধুনিক পণ্যের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় এ পেশা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। ঠিক কবে নাগাদ এখানে মৃৎশিল্পের গোরাপতন হয়েছে, সেটা সঠিকভাবে বলতে না পারলেও তিনি জানান, তার বারর আমল থেকেই এখানকার মাটির তৈরি জিনিসপত্রের খ্যাতি সারা দক্ষিণাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। তার বাবা দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে মাটি তৈরি জিনিসপত্রের আগাম অর্ডার পেতেন। তখন তাদের কুমারপাড়া স্বর্ণযুগ পার করেছে।
তিনি আরো জানান, এক সময় মাটির তৈরি মালসা ছিল অন্যতম প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র। বিশেষ করে অত্র অঞ্চলে এর চাহিদা ছিল প্রচুর। এছাড়া তাতের হাঁড়ি, মাটির কলস এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হওয়ায় প্রচুর বিক্রি হতো। তবে সেই দিন এখন আর নেই। বর্তমানে বিভিন্ন মেজবানের অনুষ্ঠানে প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া বাসা বাড়িতেও এখন ম্যালামাইন ও প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা বেশি হওয়ায় মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা এখন তলানিতে এসে পৌঁছেছে। এখন অল্প পরিমাণে ফুলের টব বিক্রি হয়, তবে কাঁচামালের দাম বেশি হওয়াতে ক্রেতারা এটারও বিকল্প পদ ব্যবহার শুরু করেছেন ।
হরেন্দ্র পাল জানান, পণ্যের চাহিদা কম থাকায় নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এ পেশায় আসতে চায় না। বর্তমানে তিনি বাদে আর অল্প কয়েকজন এই পেশায় আছেন।
গৃহবধূ মিনতি রানী পাল বলেন, মাটির এসব কাজ আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। আমাদের কয়েক পুরুষ ধরে এ কাজ করে আসছে। আমরাও করছি। মাঠ থেকে মাটি এনে পণ্য তৈরি করে বিক্রি করে আমরা জীবিকা চালাই।
এ বিষয়ে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, সরকার ঐতিহ্যবাহী পেশা ও পণ্যগুলো রক্ষায় বদ্ধপরিকর। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সবার এগিয়ে আসা উচিৎ। তাদের যদি কোনো সহায়তার দরকার হয়, সেটা অবশ্যই করা হবে।