182 বার পঠিত
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি>বরগুনার তালতলী উপজেলার বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী নিদ্রা ফকিরহাট, নিশান বাড়িয়ায় শুরু হয়েছে শুঁটকি উৎপাদন। এই মওসুমে এখানে প্রচুর পরিমাণে শুটকি উৎপাদন হয়।
চলতি শুষ্ক মওসুমে সমুদ্র থেকে আহরণ করা হবে লাখ লাখ মেট্রিক টন মৎস্য। নিদ্রা ফকির হাট, নিশান বাড়িয়া সহআরো অনেক স্থানে পুরোদমে শুরু হয়েছে শুঁটকি উৎপাদনের কাজ। শুঁটকির প্রধান উৎস হল সমুদ্র থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্য আহরণ করে শুঁটকিতে রূপান্তরিত করা। আহরিত মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লইট্যা,ছুরি,ফাইস্যা,রইস্যা, পোয়া,কুরাল,ফাত্রা,মাইট্যা, রূপচাঁদা,ইলিশ,লাক্ষা,চিংড়ি, রাঙ্গাচকি,হাঙ্গর,রিটা,ফুটকা, সামুদ্রিক ঝিনুক,কাঁকড়া, লবষ্টার,সমুদ্রিক শসা, হাঙ্গরের বাচ্চা ও আরো অনেক প্রজাতির মাছ। সারা বছর মাছ আহরণ করা হলেও মূল উৎপাদনের মওসুম হল নভেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত। এই সমস্ত মৎস্য গভীর সমুদ্র থেকে আহরণ করে কূলে এনে বিভিন্ন পদ্ধতিতে শুঁটকিতে রুপান্তরিত করা হয়।
বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরিত করা হলেও মূলত শুঁটকি উৎপাদনের জন্য ৮০ শতাংশ আয় আসে উল্লেখিত মাছ থেকে। এগুলো আবার খুচরা বাজারে বিভিন্ন দামে বিক্রি করা হয়। শুঁটকি শিল্পের সাথে জড়িত আছে লাখ লাখ হতদরিদ্র বিশাল জনগোষ্ঠী। কিন্তু এ শিল্প থেকে এ মওসুমে কোটি কোটি টাকা আয়সহ বিশাল একটা জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হয়। শুঁটকি উৎপাদন বিভিন্ন পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে প্রাকৃতিক, অন্যটি হচ্ছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে। প্রাকৃতিক পদ্ধতি হলো সনাতনী গতানুগতিক পদ্ধতি। অন্যটি হচ্ছে আধুনিক ও বৈদ্যুতিক তাপের দ্বারা শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করা হয়। প্রচলিত উপায়ে শুঁটকি উৎপাদন থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শুঁটকি উৎপাদন অত্যন্ত মানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত।
এ শিল্প আবার বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। যেমন প্রচলিত পদ্ধতিতে উৎপাদনকারীরা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক পদ্ধতি অনেকে জানেও না এবং এ ব্যাপারে উৎসাহিত ও প্রশিক্ষিত করার জন্য কর্তৃপক্ষের কোন ভূমিকাও দেখা যাচ্ছে না। এশিল্প মাধ্যমে উৎপাদন সংশ্লিষ্ট ছাড়াও সরকারসহ বিশাল একটা জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হলেও এখানে উল্লেখযোগ্য কিছু সমস্যা রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- খোলা মাঠে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ধূলাবালিতে শুঁটকি উৎপাদন করা। শুঁটকি সংরক্ষণে মাছের সাথে বিভিন্ন ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ মিশ্রণ। এমনকি বিষ মিশ্রিত করে শুঁটকি সংরক্ষণ করা। পঁচা (খাবার অনুপযোগী) মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকিতে রূপান্তরিত করা। পুরো এলাকা জুড়ে মশা মাছির উৎপাতও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়।
আবার অন্যদিকে শুঁটকি উৎপাদনাকারী কোম্পানিরা বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। তার মধ্যে হলো পুঁজির অভাব, দাদনদারের শোষণ, সরকারি সুযোগ সুবিধার অভাব, মাছের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, আর্থিক দৈন্যতাসহ মধ্যস্বত্ব ভোগীর প্রভাব, অন্যদিকে সরকারের শুঁটকি উৎপাদনের জন্য নেই কোন সরকারি নীতিমালা, মনিটরিং, প্রশিক্ষণ ও আধুনিক ব্যবস্থা। তাই দিন দিন এ শিল্পের উন্নতি হলেও আধুনিক ও মানসম্মত পদ্ধতি কোন উৎপাদকেরা গ্রহণ করছে না। তাই উৎপাদনের বিভিন্ন সমস্যা বিভিন্ন ধরণের।
তৎমধ্যে উল্লেখযোগ্য সমস্যা হল শুঁটকি উৎপাদনে নিয়োজিত শ্রমিকের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। আবার মালিকও লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে নিশ্চিন্তে থাকতে পারে না। এসব মিলিয়ে মৎস্য সম্পদ মারাত্মক হুমকীর মধ্যে আছে।
এখানেও উল্লেখ কিছু সমস্যা আছে। যেমনঃ অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য আহরণ, ডিম ওয়ালা (মা মাছ) ধরা, নদী ভরাট, গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার মধ্যে ভারত, মায়ানমার ও থাইল্যান্ডের জাহাজ অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে মৎস্য আহরণ। গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ করতে যাওয়া কয়েকজন মাঝিমাল্লাদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, বাংলাদেশের উপকূল হতে মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে শতশত ভারত ও থাইল্যান্ডের ট্রলিং জাহাজ লাক্ষা, কুরাল, ইলিশ, মাইট্যা, রাঙ্গচকি, চিংড়িসহ অনেক মাছ আহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে।
বিদেশী ট্রলিং জাহাজ বড় বড় মাছগুলো হিমায়িত করে ছোট মাছ এবং নষ্টগুলো সাগরে ফেলে দেয়। ফলে পরিবেশ বিনষ্টের পাশাপাশি মাছের সংকটও দেখা দেয়। শুঁটকি শিল্পে বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও এর সাথে জড়িত বিশাল জনগোষ্ঠী মনে করেন যে, এ মওসুম তাদের জন্য আর্শিবাদ স্বরূপ। কেননা এশিল্পে বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে জড়িত।