37 বার পঠিত
ফেলানীকে ভুলে যাওয়া সহজ, কিন্তু ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না। ফেলানী কোনো গুরুত্বপূর্ণ মানুষ নয়, অতি সামান্য একজন কিশোরী। ২০১১ সালে মারা গেছে ভারত-বাংলাদেশ সিমান্তে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে। তখন গণমাধ্যমে একটি ছবি বের হয়েছিলো, সীমান্তবর্তী কাটাতারে ঝুলন্ত লাশ, আমরা চমকে উঠেছিলাম। তার মৃত্যুটি একটি প্রতীকী ঘটনা হয়ে রয়ে গেছে।
ফেলানীর মৃত্যু হয় তার বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে। কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বর উপজেলা সীমান্ত। মধ্যরাত। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি। বিএসএফের গুলি খেয়ে যে কিশোরী মেয়েটা ঝুলে থাকল কাটাতারে নাম তার ফেলানী। হবু স্বামীর জন্য ভালোবাসার কথা লিখেছিল সে। সুঁই সুতোয় সেটি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টাও চলছিল। সাথে একটি ফুল। হাত রুমালে নকশা করে নিজের মনের ভেতর লুকিয়ে রাখা আবেগটা জানাতে চেয়েছে সে। সেটি আর হয়ে ওঠেনি। কুড়িগ্রামের ঘন কুয়াশায় ঢাকা রাতের আঁধারে কাটাতারের বেড়ায় আটকে গেলো তার স্বপ্ন। সেই সাথে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফের গুলিতে গেলো জীবন। ডান বুকে বিধে যাওয়া গুলির সাথে বেরিয়ে আসা রক্তের দাগটা স্পষ্ট ছিল। সাদা কাফনে জড়ানো কচি মুখের দিকে তাকিয়ে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বর উপজেলা দক্ষিণ রামখানার মানুষ। এমন বর্বরতা তারা আগে দেখেনি। তাই অনেকেই ছিলেন বিস্ময়ে বিমূঢ়।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মীদের সমালোচনার মুখে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচারকাজ শুরু হয়। এ সময় আদালতে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা নুরল ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেন বিএসএফের বিশেষ আদালত।
এ রায় প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন মাসুমের সহযোগিতায় ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করে ফেলানীর পরিবার। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনর্বিচার শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও আদালতে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। এরপর ২০১৫ সালের ২ জুলাই আদালত পুনরায় অমিয় ঘোষকে খালাস দেন।
রায়ের পর একই বছর ১৪ জুলাই মানবাধিকার সংগঠন মাসুম ফেলানীর বাবার পক্ষে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রিট করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি শুনানির দিন নির্ধারণ করা হলেও শুনানি হয়নি। এরপর ২০১৯ ও ২০২০ সালে কয়েকবার শুনানির দিন নির্ধারণ করা হলেও শেষ পর্যন্ত শুনানি হয়নি। [ সূত্র: প্রথম আলো]
আজ অনেক বছরপর বেরোবির প্রশাসন একটি দারুণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ফেলানী পিতা মাতাকে এনে শহীদ ফেলানী নামের হল ঘোষণা করেছে। তাকে আবার আমাদের মাঝে জীবিত করেছে, এভাবেই যুগযুগ ধরে হাজারো ফেলানী আমাদের হৃদয়ে জীবিত থাকুক।