47 বার পঠিত
অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে লক্ষ্মীপুরের বন্যা পরিস্থিতি। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) পানির উচ্চতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গতকাল সোমবার আরও কম ছিল। ফলে চরম সংকট পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে জেলাজুড়ে। পানির উচ্চতা না কমলে মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯০ ভাগ এলাকাই এখন পানির নিচে। এতে ৮ লাখ ৪৭ হাজার ৪২০ জন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এদিকে পানিবন্দি লোকজন ছুটে চলেছেন আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে। কোনো কোনো আশ্রয়কেন্দ্র পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর নোয়াখালী থেকে রহমতখালী খাল, ভুলুয়া খাল ও ওয়াপদা খাল হয়ে ব্যাপকভাবে পানি ঢুকতেও দেখা গেছে। এতে পনির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে। তবে পানিবন্দি অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয়ের বাড়িতেও আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকার পানিবন্দিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুর্গম এলাকাগুলোতে পানিবন্দিদের জন্য কোনো খাবার যাচ্ছে না। এজন্য ফেসবুকসহ নানাভাবে ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে মানুষ। দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছাতে পর্যাপ্ত নৌকার প্রয়োজন।
লক্ষ্মীপুরে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর মধ্যে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ, দিঘলী, চরশাহী, উত্তর জয়পুর, মান্দারী, দত্তপাড়া, বাঙ্গাখাঁ, লাহারকান্দি, তেওয়ারীগঞ্জ, ভবানীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের রহমতখালী খাল সংলগ্ন লামচরী, সমসেরাবাদ, বাঞ্চানগর, মধ্য বাঞ্চানগর, মজুপুর এলাকা, চররুহিতা,দালাল বাজার, পার্বতীনগর, কমলনগরের তোরাবগঞ্জ, চরকাদিরা, রামগতির চরপোড়াগাছা, চরবাদাম, রামগঞ্জের লামচর, কাঞ্চনপুর, চন্ডিপুর, ভাটরা, ভোলাকোট, রামগঞ্জ পৌরসভা, ভাদুর, করপাড়া, দরবেশপুর, রায়পুরের সোনাপুর, কেরোয়া, চরপাতা, বামনি, চরমোহনা, রায়পুর, দক্ষিণ চর-আবাবিল ইউনিয়ন ও রায়পুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা বন্যায় কবলিত। এর মধ্যে দিঘলী, চরশাহীসহ দুর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। সেসব এলাকার মানুষ খাদ্যসংকটে হাহাকার করছেন। যে যেভাবে পারছেন ত্রাণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত নৌকা না থাকায় উদ্ধারকারী ও ত্রাণ সহায়তাকারীরা দুর্গম এলাকাগুলোতে যেতে পারছেন না বলে জানা গেছে।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জসীম উদ্দিন বলেন, চারদিকে শুধু পানি আর পানি। বসতঘরে পানি ঢুকে পড়ায় লোকজন আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় একটি বিদ্যালয় ভবনকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করে সেখানে লোকজনকে উঠানো হচ্ছে। কিন্তু দুর্গত এলাকায় ভুক্তভোগী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
এদিকে সরকারি এবং রাজনৈতিক দল এবং ব্যক্তি উদ্যোগে শহরের আশপাশে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণ দেওয়া হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছায়নি জানিয়েছে পানিবন্দি বাসিন্দারা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৪১৯ টন জিআর চাল ও ১০ লাখ নগদ টাকা (জিআর ক্যাশ) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ টাকার মধ্যে প্রত্যেক উপজেলার জন্য দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হয়।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, রোববার (২৫ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরে ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বন্যার পানি ৬ ইঞ্চি বৃদ্ধি পেয়েছে। রহমতখালী খাল হয়ে নোয়াখালীর পানি লক্ষ্মীপুরে অনবরত ঢুকছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান বলেন, জেলায় বর্তমানে ৮ লাখ ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ২৩ হাজার ৪০৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৯৪৩ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খিচুড়ি রান্না করে পরিবেশন করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক দুর্গম এলাকায় যারা আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি, তাদের জন্য শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা জেলার সর্বত্র ত্রাণ বিতরণ করছেন।