164 বার পঠিত
ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে কোনো ফায়ার সেফটি (অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা) ছিল না। প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। সড়ক, ফুটপাত ও দোকানে থাকা মানুষের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়েছে। এছাড়া পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও ছিল না।’
আজ বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে নয়টায় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মোহাম্মদপুর নতুন বাজার (কৃষি মার্কেট) আগুন ধরার খবর পেয়ে নয় মিনিটের মাথায় আমরা এখানে চলে আসি। রাত তিনটা ৫২ থেকে আমরা এখানে আগুন নির্বাপনের চেষ্টা শুরু করি। আমরা সকাল নয়টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণ এনেছি। ১৭টি ইউনিটে ১৫০ জন ফায়ার ফাইটার (দমকলকর্মী) কাজ করেছে। আমাদের সঙ্গে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী সহযোগিতা করেছে।’
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আগুন লাগা এই মার্কেটে কোনো সেফটি প্ল্যান (নিরাপত্তা পরিকল্পনা) নেই। এই মার্কেটে বারংবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে গণসংযোগ করা হয়েছে। সচেতনতার প্রোগ্রাম যেভাবে আমরা করেছি, সেভাবে তারা সাড়া প্রদান করেননি। এই মার্কেট কিছুটা বঙ্গবাজার টাইপের। এখানে ভেতরে বিভিন্ন মালামালে দিয়ে গাদাগাদি করে রাস্তাগুলো বন্ধ করা ছিল এবং পুরো মার্কেট টাইট কলাপসিবল গেট দিয়ে আটকানো ছিল।’
ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এখানকার নাইট গার্ড যারা ছিলেন তারা বাইরে ছিলেন। তাদের খুঁজেই পাওয়া যায়নি। ফায়ার ফাইটারদের ভেতরে প্রবেশ করতে বেগ পেতে হয়েছে। তালা ভেঙে এবং কলাপসিবল গেট ভেঙে আমাদেরকে ভেতরে যেতে হয়েছে। এ মার্কেটের বাইরেও বিভিন্নভাবে রাস্তাগুলো দখল করা ছিল।’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘দোকানের সামনে ছোটখাটো দোকান, আমাদের একটা কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোর জন্য আমাদেরকে বেগ পেতে হয়। আমরা আশার পরই আগুনের মাত্রা অনেক বেশি দেখেছি। একপর্যায়ে মার্কেটের প্রায় চার ভাগের তিনভাগ সম্পূর্ণ আগুন ধরে যায় এবং আমরা চেষ্টা করি এই মার্কেটের ভেতরে যেন আবদ্ধ থাকে। আমাদের ফায়ার ফাইটাররা সর্বাত্মক চেষ্টা করে আগুন এক জায়গায় সীমাবদ্ধ রাখতে পেরেছে।’
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এখনও আগুন পুরোপুরি নির্বাপনের চেষ্টা চলছে। আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে, তবে নির্বাপনে কিছুটা সময় লাগবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা প্রতি সপ্তাহে শনিবার গণসংযোগ করি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় মার্কেটের প্রতিনিধিদেরকে ডেকে অনেকবার আলোচনা করেছি, অনেক ওয়ার্কশপ করেছি। মার্কেটের যারা মালিকপক্ষ তাদের ডেকে আমরা বুঝিয়েছি—সচেতনতার প্রোগ্রাম আমরা কীভাবে করব। প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিং তাদেরকে করতে হবে। এই মার্কেটে প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো ইকুইপমেন্টই ছিল না। কোনো ধরনের পানির সোর্স ছিল না। আমরা সব থেকে বেশি বেগ পেয়েছি পানির সোর্স পেতে। এখানে বিভিন্ন ভবনে পানির সোর্স রয়েছে, কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। খুব দ্রুত আমাদের পানি শেষ হয়ে যায়। বিশেষ পানিবাহিত গাড়ি এনে এবং অন্যান্য বাহিনীর সহায়তায় আমরা এই কার্যক্রমগুলো করি।’
আগুন নেভানোর এত সময় লাগার আরও বড় কারণ প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে আরেকটি বড় সমস্যা ছিল মানুষের ভিড়। মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের পুলিশ, বিজিবি খুবই হিমশিম খেয়েছে। এই ভিড়ের কারণে আমাদের এত সময় লেগেছে। যদিও মানুষ চেষ্টা করতে চায় আমাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য, কিন্তু আদৌ এতে আমাদের অনেক সময় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।’
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে আমরা তদন্ত করে জানার চেষ্টা করব। তবে যতটুকু বুঝেছি—মুদি দোকানের অংশ থেকেই আগুনের সূত্রপাত। আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে যারা ছিল, তাদের দুই-একজন কিছুটা আহত হয়েছেন। এর বাইরে বড় ধরনের হতাহতের তথ্য নেই।’