29 বার পঠিত
সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির নামে প্রতারণায় স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সদ্য সাবেক এক অতিরিক্ত সচিবের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। তার নাম নিতিশ চন্দ্র সরকার। তিনি সম্প্রতি অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে গেছেন। এস এম আনিস নামে এক দালালের মাধ্যমে তিনি মেডিকেলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন।
শুক্রবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আনিসকে গ্রেপ্তারের পর এই তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আসলে আনিসের নেতৃত্বাধীন এই চক্রে সদ্য অবসরে যাওয়া সরকারের একজন কর্মকর্তার নাম এসেছে। তবে আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সর্বশেষ এক শিক্ষার্থীকে বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়ার নাম করে ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব নিতিশ।
মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে দেয়া ও টাকা লেনদেনের বিষয়ে এই অতিরিক্ত সচিব ও আনিসের কথোপকথনের একাধিক রেকর্ড পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
যোগাযোগ করা হলে আনিসের সঙ্গে পরিচয় থাকার কথা স্বীকার করলেও প্রতারণায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন নিতিশ চন্দ্র সরকার। তিনি বলেন, ‘টাকা নেয়ার তথ্যটি মিথ্যা।’ আনিসের সঙ্গে কীভাবে পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ও আমার কাছে আসত।’ কী কাজে আসতে জিজ্ঞেস করা হলে কোনো উত্তর দেননি নিতিশ চন্দ্র।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ জানিয়েছে, আনিস ও অতিরিক্ত সচিব ছাড়া আরও একজন এই চক্রে কাজ করেন। তার নাম জাহিদ। যিনি বর্তমানে লন্ডনে আছেন।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আনিসের কাছ থেকে ২০২৩ সালের চলমান এমবিবিএস পরীক্ষার অনেকগুলো অ্যাডমিট কার্ড, পূর্ববর্তী এমবিবিএস পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের শতাধিক চেক, পুলিশ কনস্টেবল প্রার্থীর অ্যাডমিট কার্ড, বিভিন্ন লিখিত ও অলিখিত নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, একাধিক প্যাড, পাঁচটি ডিজিটাল ও সনাতন স্ট্যাম্প, সিল এবং একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার আনিসের বরাত দিয়ে ডিবি কর্মকর্তারা জানান, এএসসি পাস করা আনিস একসময় জুট মিলে কাজ করতেন। পরে ফার্মগেট ও গ্রিন রোড এলাকায় ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি করতেন। একপর্যায়ে তিনি জড়িয়ে যান মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে দেয়ার প্রতারণায়। কয়েক বছর আগে মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে দেয়ার নামে প্রতারণার উদ্দেশ্যে সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে একটি কনসালট্যান্সি ফার্মও খুলে বসেন তিনি। আগে থেকে এই প্রতারণার কাজটি করে আসছিলেন জাহিদ। এই জাহিদের মাধ্যমে আনিসের সঙ্গে সদ্য সাবেক অতিরিক্ত সচিবের যোগাযোগ হয় বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন।
আনিসের ভাষ্যমতে, শিক্ষার্থী সংগ্রহের কাজটি করতেন আনিস। আর বেসরকারি মেডিকেলগুলোতে ভর্তির জন্য সংশ্লিষ্ট মেডিকেলে ফোন করে বলে দিতেন এসব মেডিকেলের তদারকির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব।
অতিরিক্ত সচিব থাকা অবস্থায় অন্তত ৩০ বার বিভিন্ন কাজে আনিস মন্ত্রণালয়ে গেছেন বলে গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন আনিস। আর মন্ত্রণালয়ে প্রবেশের জন্য আনিসকে পাসের ব্যবস্থাও করে দিতেন যুগ্মসচিব।
মেডিকেল কলেজে ভর্তি ছাড়াও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় দালালি ও প্রতারণা বাণিজ্য করে আনিস ইতিমধ্যে দুটি হোটেল এবং মণিপুরি পাড়ায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘এই প্রতারণার সঙ্গে আরও কারা জড়িত আছে, তা আমরা তদন্ত করছি। সম্পৃক্ততা পাওয়াসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’