45 বার পঠিত
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি>বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে, এখন গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন কোথায়? ওই ভারতের দিল্লিতে। ব্রিটেন অস্বীকার করেছে, ভিসা অনুমতি দেবে না নেওয়ার জন্য, ঠিক তেমনি আমেরিকা বলেছে ভিসা দেব না। কোনো দেশ রাজি হয়নি। ভারত যদিও এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি রাজি হয়নি, কিন্তু এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনা সেখানেই (ভারতেই) আছেন। এখন ভারত থেকে নতুন এক চক্রান্ত শুরু করেছেন।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা বিএনপির আয়োজনে গড়েয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আয়োজিত ঐক্য ও সম্প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যখন মানুষের সামনে দাঁড়াতে পারে না, এখন আমাদের হিন্দু ভাইদেরকে ঢাল হিসেবে আগে বাড়ায় দিতে চায়। এটাই তাদের একটা কৌশল-খেলা, অপচেষ্টা। যখনই তারা হারতে থাকবে, যখন জনগণ তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরায় নিবে, নির্বাচনে হেরে যাবে, আন্দোলনে হেরে যাবে তখন তারা হিন্দু ভাইদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে হিন্দু মা-বোনেরা, ভাইয়েরা আছেন। তারা ভালো করে জানেন এই বাংলাদেশে কখনই হিন্দু-মুসলমানে যুদ্ধ হয় না। দিনের পর দিন হাজার বছর ধরে এই বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান একসঙ্গে, এক গাছে অনেক ফুলের মতো ফুটে রয়েছি। এই সম্পর্কে তারা ফাটল ধরাতে চায়, তারা প্রমাণ করতে চায় এই বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার করছে, নির্যাতন করছে; তারা এমনভাবে এটাকে ছড়াতে চায় যে, ছড়িয়ে তারা আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশে হেয় প্রতিপন্ন করতে চায়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের কথা খুব পরিষ্কার, রাজনৈতিক যখন পটপরিবর্তন হয়, তখন একটা গোলযোগ হয়, সেই গন্ডগোলটা কোনো দিনই ধর্মীয় নয়, সেটা রাজনৈতিক। হিন্দু-মুসলমান আলাদা নয়, রাজনীতি আলাদা হতে পারে, কিন্তু ধর্মীয় কোনো বিভেদ এখানে নাই।
‘আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই- এই ধরনের অপচেষ্টা আপনারা করছেন, আপনাদের উদ্দেশ্য ভাল না। আপনারা বাংলাদেশে আবার অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চান, আপনারা ভুলে যাবেন না- আপনাদের নেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। কখন দেশ ছেড়ে পালায় মানুষ? যখন সে এত অপকর্ম করে তার আর দাঁড়াবার জায়গা থাকে না, এই দেশে যখন তাকে কেউ আর জায়গা দিতে চায় না, কখন পালায়? যখন পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায় মানুষ তাকে আর চায় না। শেখ হাসিনাকে কি এখন কোন মানুষ চায়? কেন চায় না জানেন? কারণ সে এত অত্যাচার করছে, এত বেশি নির্যাতন করছে, এত চুরি করছে; আজকে খবরের কাগজে দেখলাম ৯২ হাজার কোটি টাকা পাচার করে দিছে। ব্যাংকগুলোকে খায়া ফেলছে, গিলে ফেলছে, একটা ব্যাংকও ঠিক নাই, সব ভেঙে পরে যাচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার দেশপ্রেমিক ছাত্র ভাইদেরকে যারা তাদের ঐতিহ্য রক্ষা করে এই দেশকে রক্ষা করেছে। বারবার ছাত্ররা এই দেশে ৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর স্বাধীনতা আন্দোলন, ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশকে রক্ষা করেছে। আর আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে তারা ঠিক প্রয়োজনের মুহুর্তে জনগণের পাশে এসে দাঁড়ায়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পালিয়েও লাভ হবে না, আমরা বলেছিলাম- কোন দিকে পালাবে তুমি? কোনদিকে পথ নাই। উত্তরে পর্বতমালা, দক্ষিণে বঙ্গপসাগর, কোন পালাবার পথ নাই। আজকে আওয়ামী লীগের ওই অবস্থা হয়েছে। এটাই হয়- যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে, জনগণের উপর অন্যায়-অত্যাচার করতে থাকে, করেছে- আমাদের আলেম-ওলামাকে ফাঁসি পর্যন্ত দিয়েছে। তাদের কারাগারে নির্যাতিত করে রেখেছে, আমাদের বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদেরকে দিনের পর দিন কারাগারে রেখেছে; আমিও কারাগারে ছিলাম অনেকদিন আপনারা জানেন সেটা। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নাই, পালিয়ে যেতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে।’
তিনি বলেন, ‘আমার খুব খারাপ লেগেছে যখন আমি দেখেছি, বিজয় স্বরণীর সামনে শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তিটা ছিল, দেখি অসংখ্য মানুষ সেই মূর্তিকে দঁড়ি বেঁধে টেনে হিঁচড়ে ফেলে দিচ্ছে। খারাপ লেগেছ কেন তিনি তো আমাদের নেতা ছিলেন তাইনা? স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শেখ মুজিবের বিরাট ভূমিকা ছিল তাই না? এই লোকটাকে এই শেখ হাসিনা কত ছোট করে ফেলল, আজ তার মূর্তি নামিয়ে ফেলছে। তার জন্য সম্পূর্ণভাবে শেখ হাসিনা দায়ি। মোড়ে মোড়ে, কথায় কথায় একটা করে ম্যুরাল লাগায় বসে আছে, এটা এদেশের মানুষ মানে নারে ভাই। এই দেশের মানুষের হৃদয় থেকে, ভাব থেকে বুঝতে হবে অহংকার সহ্য করে না মানুষ, আল্লাহ সহ্য করে না।’
জনগণের পাশে বিএনপি উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘আমরা সবসময় আপনাদের পাশে আছি, আপনারা আমাকে কথা দেন, আপনারা আমাদের হিন্দু ভাইদের পাশে থাকবেন, কথা দেন। যেকোন হামলা আসুক আপনারা মোকাবেলা করবেন এবং আজকে যদি অন্য কেউ ষড়যন্ত্র করে সেই ষড়যন্ত্রকে আপনারা রুখে দিবেন।’
এসময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজা ফয়সল আমীন, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিনসহ জেলা, উপজেলা বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন।