1. admin@daynikdesherkotha.com : Desher Kotha : Daynik DesherKotha
  2. arifkhanjkt74@gamil.com : arif khanh : arif khanh
  3. alaminjhalakati@gmail.com : Al-Amin Khan : Al-Amin Khan
পাবনা মানসিক হাসপাতাল, বর্তমানে নিজেই রুগ্নদশায়! - দৈনিক দেশেরকথা
শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্বৈরাচার পতনে বাক স্বাধীনতা  ফিরে পেয়েছে গণমাধ্যম পাবনায় বাস-অটোভ্যান সংঘর্ষে প্রাণ গেল ভ্যান চালকের গলাচিপায় কচ্ছপ পাচারের সময় ১ নারী আটক খাগড়াছড়ি বাজার ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা করলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী   কটিয়াদীতে জাতীয় নাগরিক কমিটির শ্রদ্ধা নিবেদন কিশোরগঞ্জে মহান বিজয় দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে সংবর্ধনা বিজয় দিবসে ইবি পাঠকবন্ধুর শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন জাতীয় স্মৃতিসৌধে -শহীদদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা কিশোরগঞ্জে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে  বিএনপির মোমবাতি প্রজ্জ্বলন  কিশোরগঞ্জে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উদযাপন গত ৫৩ বছরে রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার করতে পারেনি :সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

পাবনা মানসিক হাসপাতাল, বর্তমানে নিজেই রুগ্নদশায়!

মোহাম্মদ আলী স্বপন
  • প্রকাশ শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৩
পাবনা মানসিক হাসপাতাল

 276 বার পঠিত

নানা সংকটে ব্যহত হচ্ছে মানসিক রোগের চিকিৎসায় দেশের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল পাবনা মানসিক হাসপাতালের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা।

১৯৫৭ সালে ১১১ একর জমির ওপরে পাবনাতে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের একমাত্র বিশেষায়িত মানসিক হাসপাতাল। দেশ স্বাধীনের আগে প্রতিষ্ঠিত এই বিশেষায়িত হাসপাতালটি আজ দেশের মানুষের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। ৬০ শয্যা নিয়ে সেবার কার্যক্রম শুরু করা এই প্রতিষ্ঠানটি এখন ৫০০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ প্রশাসনিক অবকাঠামো পরিচালনার জন্য রয়েছে জনবল সংকট। দেশের যেকোনো প্রান্তের মানুষ এই হাসপাতালে মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য এসে থাকেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রোগীর সংখ্যা যে হারে বেড়েছে সেই তুলনায় সেবার মানে আসেনি আধুনিকতার ছোঁয়া। আগের ধাঁচেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই দেওয়া হয় ব্যবস্থাপত্র। এখনো পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনে চলছে বহির্বিভাগে আসা রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম। হাসপাতালে রোগী ভর্তি নিয়ে রয়েছে দালালের দৌরাত্ম্য। আর ভর্তি হওয়া রোগীর জন্য সরবরাহকৃত বাজেটে সীমাবদ্ধ খাবার।

পারিবারিক অযত্ন আর অবহেলায় মানসিক রোগীদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে থাকে। রোগী ভর্তি করে চিকিৎসাসেবা শেষে পরিবার ও স্বজনরা তাদের ফিরিয়ে নিতে চান না। দীর্ঘ সময় একই স্থানে ঘরবন্দি থাকায় ভালো হওয়ার পরিবর্তে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন বেশিরভাগ রোগী। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক রোগীদের চিকিৎসায় আধুনিকায়ন করার দাবি সবার। একই সঙ্গে পরিবার ও স্বজনদের আরও সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়ার কথা বলছেন সংশ্লিস্টরা।

দেশের একমাত্র বিশেষায়িত মানসিক রোগের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান পাবনা মানসিক হাসপাতাল। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও এখনও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি এই হাসপাতালে। ৫০০ শয্যার এই মানসিক হাসপাতালে প্রধান ফটকের প্রবেশ মুখের সড়কের বেহাল দশা। ভর্তি হওয়া আবাসিক রোগীদের আবাসস্থল বেশ পুরোনো। সেকারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের পড়তে হয় নানা সমস্যায়। এছাড়াও রয়েছে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট। তবে অচিরেই ৬০০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের বর্তমান অবস্থা নিয়ে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, দেশের একমাত্র এই বিশেষায়িত হাসপাতালের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। মানসিক রোগে আক্রান্ত রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা অথবা সুস্থতার জন্য তাদের ভর্তি করে রেখে যান পরিবারের সদস্যরা।

বহিরাগত রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা যে ভবনটিতে দেওয়া হয় সেটির অবস্থা বেশ জরাজীর্ণ। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের বসার বা বিশ্রাম নেওয়ার কোনো জায়গা নেই। হাসপাতালের প্রবেশ মুখ থেকে শুরু করে প্রশাসনিক ভবন পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা। এ যেন অভিভাবকহীন হাসপাতাল।

সেবা নিতে আসা একাধিক রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, সারারাত জেগে ডাক্তার দেখানোর জন্য আসতে হয় আমাদের। একজন মানসিক রোগীকে সঙ্গে নিয়ে এসে তাকে একটু বিশ্রাম দেওয়ার প্রয়োজন হয়। আবাসিক হোটেলগুলোতে রাখতে চায় না। আবার সময় স্বল্পতার কারণে দ্রুত ডাক্তার দেখিয়ে চলে যেতে হয়। বেশ সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের। সরকার বা কর্তৃপক্ষ কি এই বিষয়গুলি জানে না। তবে কেন এই অবস্থা থাকে, কবে আমরা সঠিক সেবা পাবো বলতে পারেন?

সরেজমিন দেখা যায়, ডিজিটালের যুগে এই মানসিক হাসপাতালটি এখনও এনালগ যুগেই পড়ে আছে। বেলা একটার মধ্যে রোগী দেখার কাজ শেষ হয়ে যায়। ফলে দূরদূরান্তের রোগীরা ডাক্তার দেখাতে এসে পড়েন বিড়ম্বনায়। অনলাইনে সিরিয়াল নেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে এ সমস্যার নিরসন সম্ভব বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। বাইরে থেকে লোক ভাড়া করে এনে কম্পিউটারে কাজ করানো হয়।

খাবারের মান নিয়ে আছে বিস্তর অভিযোগ। গত বছর টেন্ডার জটিলতায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল খাবার সরবরাহ। পরে সেই সংকট কাটিয়ে উঠলেও মান বাড়েনি খাবারের। প্রতিদিন চার বেলা খাবারের জন্য জনপ্রতি বরাদ্দ মাত্র ১৭৫ টাকা। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, বাইরের খাবার দিতে না পারায় এখানকার নিম্নমানের খাবার গ্রহণে বাধ্য হয় রোগীরা।

হাসপাতালের দায়িত্বরত নার্স মোছা. রাজিয়া সুলতানা বলেন, মানসিক রোগের সবচেয়ে ভালো সেবা বা চিকিৎসা তার পরিবারেই দেওয়া সম্ভব। ডাক্তার দেখিয়ে তাকে সেই নিয়ম অনুসরণ করে যদি সেবা দেওয়া যায় তবে সে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। কিন্তু পরিবার বা সমাজের মানুষ তাকে খারাপ কথা বলে শারীরিকভাবে টর্চার করে অসুস্থ করে তোলে। মানসিক রোগীকে যদি সঠিক সময় খাওয়া, ওষুধ, একটু বিনোদন আর ঘুমের ব্যবস্থা করা যায় তবে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. এহিয়া কামাল বলেন, একটি বিষয় আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, এই হাসপাতালে মানসিক রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। তবে এটি কোনো স্থায়ী আবাসনস্থল নয় যে রোগীকে রেখে চলে গেলাম আর তার খোঁজ খবর নিলাম না। অনেকেই মনে করেন এখানে রেখে যাবেন আর তাদের নিতে হবে না। পরিবার ও সমাজ যদি এই ধরনের রোগীকে সহযোগিতা না করে তবে এখানে কখনই শয্যা সংকট দূর হবে না। মানসিক রোগীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। তাদের পাশে এগিয়ে আসতে হবে।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা হয় পরিচালক ডা. মো. শাফ্ফাত ওয়াহিদের সঙ্গে তিনি বলেন, রোগী ও অভিভাবকদের মধ্যে একটি প্রবণতা ও ধারণা রয়েছে যে, শুধু এই একটি হাসপাতালেই মানসিক রোগের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। বিষয়টি আসলে তা নয়। এখন প্রায় প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মানসিক রোগের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই না জেনে অনেক কষ্ট করে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। এখানে তো সব ধরনের রোগীকে ভর্তি করা হয় না। চিকিৎসকদের প্রাথমিক পরামর্শক্রমেই এখানে রোগী ভর্তি করা হয়। পুরাতন হাসপাতাল, সীমাবদ্ধতা তো রয়েছে তবে অচিরেই সমস্যার সমাধান হবে। এই হাসপাতাল আরও উন্নত করার জন্য এর পাশেই একটি ৬০০ শয্যার নতুন হাসপাতাল নির্মাণের মহা পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেটির নকশা ও অনুমোদন চূড়ান্ত পর্যায়ে, সব ঠিক থাকলে খুব দ্রুতই হয়ত ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হবে। তখন হয়তো আরও ভালোভাবে মানসিক রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

৬৬ বছরের পুরাতন দেশের একমাত্র এই বিশেষায়িত পাবনা মানসিক হাসপাতাল নিয়ে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। তবু বিশ্ব মানসিক ও স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে দেশের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন রোগীদের জন্য স্থাপিত এই হাসপাতাল হবে সবার আস্থা ও নির্ভরযোগ্য সেবার স্থান। হাসপাতালে পুরুষ ও নারী ওয়ার্ড রয়েছে ১৯টি। এর মধ্যে রোগীর ধরন ভেদে পুরুষদের জন্য ১৪টি আর নারী রোগীদের জন্য ৫টি ওয়ার্ড রয়েছে।

পাবনা মানসিক হাসপাতালে দালালদের প্রভাব কোনোভাবেই কমছে না। রোগী ভর্তি, রোগীর চিকিৎসাসেবা নিতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের অনেকেই দালালদের খপ্পরে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দালালদের বেশিরভাগই রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির নামে বেনামে গড়ে উঠা নানা ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে রোগীদের হয়রানি করছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঝেমাঝেই অভিযান চালিয়ে অনেক দালালকে আটক করে। কিন্তু তারা বেরিয়ে এসে আবারও শুরু করে কাজ। মানসিক হাসপাতালে কর্মরতদের অনেকের সঙ্গেও দালালদের সংযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ আছে।

দেশেরকথা/বাংলাদেশ

এই বিভাগের আরো খবর

ফেসবুকে আমরা

এই সাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া কপি করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।কপিরাইট @২০২০-২০২৪ দৈনিক দেশেরকথা কর্তৃক সংরক্ষিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Shakil IT Park