205 বার পঠিত
পাবনার আটঘরিয়া উপজেলায় দেশি-বিদেশী বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষে বড় ধরনের সুফল পাচ্ছেন কৃষক। ভোজ্যতেলের দাম বাড়তি থাকায় সরিষা বীজ বিক্রিতেও ভালো দাম পাচ্ছেন। এতে কৃষকদের মুখে হাসি ফোটেছে।
আগে এই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রথমে আমন চাষ হত, এরপর বোরো আবাদ চলত।
কিন্তু বোরো আবাদে সেচের প্রয়োজন থাকায় সবজমিতেই সেই সেচ সুবিধা মিলত না। এতে বিপুল জমি অনাবাদি থাকত। কৃষি বিভাগের পরামর্শে অনাবাদি সেই জমিতে সরিষা চাষ করেছেন কৃষক, এরপরই সুফল পেতে শুরু করেছেন। হাসি ফুটেছে এই কৃষকদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার উপজেলার প্রায় সব অঞ্চলে জমিতে এক থেকে দুটি ফসলের বেশি আবাদ হত না। সরকারের কৃষিবান্ধব নানা পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে এই উপজেলার জমিতে চাষ হচ্ছে একটি বাড়তি ফসল। আমন কাটার পর পড়ে থাকা জমিগুলোতে আবাদ হচ্ছে সরিষা। অথচ বছর খানেক আগেও পানি সংকটসহ নানা কারণে বোরো ধান কাটার পর দীর্ঘ সময় পড়ে থাকত এ সব অঞ্চলের জমি।
উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নের নাগদহ গ্রামে আড়াই বিঘা শতক জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন কৃষক ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, ধান চাষের পর বাকি সময় জমি পরিত্যক্ত থাকত। পরে আটঘরিয়া কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমি এই জমিতে সরিষার চাষ করি। এই জমিতে আমার প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যদি ভালো ফসল হয় তাহলে অনেক টাকা বিক্রি করতে পারব।
অপর কৃষক বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী কনক বলেন, অনাবাদি জমি চাষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সাড়া দিয়ে আমি এবার ৩৩ শতক জমিতে সরিষার আবাদ করি। উপজেলা কৃষি অফিস আমাকে বিনা মূল্যে সরিষার বীজ ও সার সরবরাহ করে। ফলন ভালো হলে আমি এবার বেশ লাভবান হব।
আরেক কৃষক সাদির আলী বলেন, আগে ধান কাটার পর জমি ফেলে রাখতাম। এখন ফেলে না রেখে সরিষার চাষ করছি। এতে বাড়তি আয় হচ্ছে। সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে চলতি মৌসুমে ধানের চাষ করব।
এদিকে আটঘরিয়া উপজেলার আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে দেখা মিলছে সারি সারি হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ, মৌমাছির ভোঁ ভোঁ শব্দ শোনা যাচ্ছে চলতি পথেই, যেটি আগে দেখা মেলেনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সজীব আল মারুফ জানান, তেল জাতীয় ফসলের চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ ও পরামর্শ প্রদান অব্যাহত আছে। এ ছাড়া সরিষা চাষে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় এ বছর তারা বেশি জমিতে সরিষা চাষ করছেন। এতে এক জমিতে দুইয়ের বেশি ফসল চাষাবাদ করে কৃষকরা সফল হচ্ছে।
তবে চলতি বছরে আটঘরিয়া উপজেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৩ হাজর ৫০০ হেক্টর।
সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সাময়িক পতিত জমিতে যদি সরিষার আবার করা হয় সেক্ষেত্রে কৃষকরা বড় ধরনের লাভবান হতে পারে। এ প্রেক্ষিতে এবার কৃষকের মাঝে বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় বীজ ও সার বিতরণ করেছে কৃষি কার্যালয়। অনেক জায়গায় বাম্পার ফলনও হয়েছে।
আটঘরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সজীব আল মারুফ আরো বলেন, বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করতে আমরা কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি বিনা মূল্যে বিভিন্ন জাতের সরিষা বীজ ও সার কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও আমরা কৃষকদের পরামর্শসহ সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছি।