192 বার পঠিত
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় চলতি মৌসুমে সোনালী আঁশ পাটের ভালো ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও ধোয়ার পাশাপাশি নতুন পাট হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে। প্রতিবারের মতো এবারও পাটের পাশাপাশি এ মৌসুমে পাট খড়ি বিক্রি করে কৃষকেরা বাড়তি অর্থ উপার্জন করে চলেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় জানায়, চলতি বছরে ফরিদপুরে মোট ৮৮ হাজার ৩৩ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ২২ হাজার ৬২৭ মেট্টিক টন।
সদরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব শ্যামপুর গ্রামের পাট চাষী বিরাজ মোল্লা জানান, তিনি এবার দশ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। কিন্ত এবার পাটের দাম অনেক কম বাজারে। কিন্ত জমির পাট থেকে যে পাট খড়ি পেয়েছেন তা ভালোভাবে শুকিয়ে পরিষ্কার করে বিক্রি করতে পারলে তা থেকে ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় হবে।
তিনি জানান, আমাদের পাশের উপজেলা চরভদ্রাসনে একটি বোর্ড ফ্যাক্টরি রয়েছে পাট খড়ি সরাসরি ওইখানে দিতে পারলে বেশি লাভবান হওয়া যেত। কিন্ত ওইখানে দেওয়ার আগেই গ্রাম থেকে মানুষ রান্নার কাজে ও ঘর দেওয়ার কাজে ব্যবহারের জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি আঁটি পাট খড়ি ছয় টাকা থেকে সাত টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর ১০০ আঁটি পাটখড়ি ৬০০ টাকা থেকে সাড়ে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে করে কৃষকেরা পাটের কম দাম পেলেও পাট খড়ি বিক্রি করে বাড়তি অর্থ ঘরে তুলতে পারছেন।
সদরপুর উপজেলা কৃষি কার্যালয় জানায়, এ বছর উপজেলার ৯ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৬ হাজার ৫২৮ হেক্টর জমিতে তোষা, মেছতা ও কেনাফ জাতের পাটের চাষাবাদ করেছে কৃষকেরা। তবে মেছতা জাতের পাট বেশি চাষ হয়েছে। এবার পানির সংকট থাকার কারনে পাটের সোনালি রং খুব কম লক্ষ্য করা গিয়েছে এবং বাজারে পাটের সংকট না থাকায় পাট বেশি উৎপাদন হওয়ায় এই বছর পাট বিক্রি করে বেশি লাভবান হয়নি তারা। কিন্ত কৃষকেরা পাট ছাড়াও পাট খড়ি বিক্রি করে ক্ষতি পুশিয়ে বাড়তি আয় করছেন।
সদরপুর উপজেলার স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ীরা গ্রামে গ্রামে কৃষকের বাড়ি বাড়ি থেকে পাট খড়ি কিনে তাদের গোডাউনে বিক্রি করার জন্য মজুদ করে রেখে দিচ্ছে। পরবর্তীতে যখন পাটের সিজন থাকবেনা উপজেলায় যখন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাবে তারা তখন বেশি দামে এই পাট কাঠি বিক্রি করবে বলে জানা গিয়েছে।
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ মোঃ রকিবুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর ফরিদপুরে মোট ৮৮ হাজার ৩৩ হেক্টর জমি থেকে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ২২ হাজার ৬২৭ মেট্টিক টন। এবার পাটের ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।
তিনি বলেন, আগে শুধু পাট কাঠি রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হতো, কিন্তু এখন পাটকাঠি দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়াও এগুলো দিয়ে পার্টিক্যাল বোর্ড ও পাট কাঠি পুড়িয়ে এর ছাই দিয়ে কম্পিউটারের প্রিন্টিং মেশিনের কালি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ফলে জেলায় এবার পাটের দাম কিছুটা কম থাকলেও পাট খড়ির দাম এবার ভালো। এবার জেলায় একশত আটি পাটকাঠি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে কৃষকেরা পাট খড়ি বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছেন।