79 বার পঠিত
লক্ষ্মীপুর জেলা সদর থেকে মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরে দালাল বাজারের জমিদারবাড়িটির সামনে দাঁড়ালে এমন অনুভূতি হতে পারে আপনার।
দালাল বাজার জমিদারবাড়ি হিসেবে পরিচিত বাড়িটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৪০০ বছরের ইতিহাস।
জানা যায়, লক্ষ্মীনারায়ন নামে জনৈক ব্যক্তি কাপড়ের ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে দালাল বাজার আসেন। তার পুত্র ব্রজবল্লভ স্বীয় দক্ষতা গুণে ব্যবসার প্রসার ঘটান। ব্রজবল্লভ পুত্র গৌরকিশোর কলিকাতায় লেখাপড়ার সুবাদে ইষ্টইন্ডিয়া কোম্পানীর সহচর্যে আসেন এবং জমিদারী খরিদ করেন। গৌরকিশোর ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে রাজা উপাধী লাভ করে। গৌরকিশোর রায় ও রাণী লক্ষ্মী প্রিয়া ছিলেন নি:সন্তান। তারা ঢাকার বিক্রমপুর থেকে গোবিন্দকিশোরকে পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করে। গোবিন্দ কিশোর পুত্র নলীনি কিশোর রায় চৌধুরী তাদের জমিদারীর খাজনা আদায়, তদারকী ও প্রসারে দক্ষতার পরিচয় দেয়। দালাল বাজার এন.কে উচ্চ বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয়, ঠাকুর মন্দির এ পরিবারের অবদান। জমির বাড়ির প্রাচীর, অন্দর মহল, নির্মাণ সামগ্রী বিশেষ করে কয়েকটন ওজনের লোহার ভীম, বিরাটাকার লোহার সিন্দুক, নৃত্যশালা, বহিরাঙ্গণ দেখতে আজো মানুষ দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসে।
প্রায় ৪০০ বছর আগে এই জমিদার বাড়ি জমিদার লক্ষ্মী নারায়ণ বৈষ্ণব প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর আদি নিবাস ছিল ভারতের কলকাতায়। পরবর্তী সময়ে তিনি লক্ষ্মীপুরে এসে জমিদারির সূচনা করেন। তাই অনেকের কাছে এটি লক্ষ্মী নারায়ণ বৈষ্ণবের বাড়ি হিসেবেও পরিচিত। বর্তমানে দালাল বাজার জমিদারবাড়ি হিসেবে পরিচিতির কারণ হচ্ছে তাঁর বংশধরেরা ব্রিটিশ শাসনামলে এই অঞ্চলের বাণিজ্যিক এজেন্ট ছিল। তাই স্থানীয় লোকেরা তাঁদের ব্রিটিশদের দালাল মনে করতেন। সে কারণে বাড়িটির এমন নাম।
ইট-সুরকির ভগ্নস্তূপের দিকে তাকালে অতীত টের পাওয়া যায়। একসময় জৌলশ ছিল, প্রাণের স্ফুরণ ছিল, আজ কিছুই নেই। বাড়িটি পরিত্যক্ত হওয়ার কদিন আগেও বাসিন্দারা এখানে ছিলেন। প্রতিদিনের মতো সকাল, বিকেল, সন্ধ্যা পার করেছেন। কিন্তু ভাবতে পারেননি, কদিন পরই তাঁদের এই আশ্রয়স্থল ছাড়তে হবে।
বাড়িটির ধসে পড়া নানা অংশ দেখে বোঝা যায়, রাজকীয় প্রবেশদ্বার, প্রশস্ত অন্দরমহল, অন্দরপুকুর, শানবাঁধানো ঘাটসহ সবই ছিল একসময়। এখন পুরোনো ইটের দেয়ালে অসংখ্য পরগাছা। ঘরের ভেতরে ময়লা-আবর্জনা। জমিদারবাড়ি ঘেঁষে রয়েছে নারকেল ও সুপারির বাগান।
লক্ষ্মীনারায়ণের বংশধরেরা বাড়িটি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর পাকিস্তান আমলে এটি বহুবার নানা চক্র দখলের চেষ্টা করেছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কেউ দখল করতে পারেনি। বহুদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার পর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এটি প্রশাসনের নজরে আসে এবং পুরোনো স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
২০২১ সালে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসনে ব্যবস্থাপনায় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের এই বাড়ির সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে রক্ষায় এই প্রাচীন নির্মাণ প্রয়োজন ছিল বলে স্থানীয় লোকজন জানান। তবে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন এটিকে বিলীন হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করা।প্রতিদিন ধ্বংসপ্রাপ্ত এই বাড়ি ঘুরে দেখতে অনেকেই আসেন। জমিদারবাড়ি দেখতে আসা কলেজশিক্ষার্থী রাকিব হোসেন বলেন, ‘জমিদারবাড়ি দেখতে এসেছি। বাড়িটির কারুকাজ অনেক সুন্দর। তবে ভেতরের পরিবেশ খুবই নোংরা। কর্তৃপক্ষ এটি সংস্কারের উদ্যোগ নিলে অনেক পর্যটক ও শিক্ষার্থী আসবেন। তাঁরা জমিদারবাড়ির ইতিহাস জানার সুযোগ পাবেন।’
স্থানীয় দালাল বাজার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী আবিদ হোসেন বলেন, ব্রিটিশ আমলের জমিদারবাড়িটি লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস ও ঐহিত্যের নিদর্শন। সরকারি উদ্যোগে এটি সংরক্ষণ করা দরকার। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানাতে এ উদ্যোগ ভূমিকা রাখবে।
প্রতিদিন ধ্বংসপ্রাপ্ত এই বাড়ি ঘুরে দেখতে অনেকেই আসেন। জমিদারবাড়ি দেখতে আসা কলেজশিক্ষার্থী রাকিব হোসেন বলেন, ‘জমিদারবাড়ি দেখতে এসেছি। বাড়িটির কারুকাজ অনেক সুন্দর। তবে ভেতরের পরিবেশ খুবই নোংরা। কর্তৃপক্ষ এটি সংস্কারের উদ্যোগ নিলে অনেক পর্যটক ও শিক্ষার্থী আসবেন। তাঁরা জমিদারবাড়ির ইতিহাস জানার সুযোগ পাবেন।’