171 বার পঠিত
প্রিয় নবী (সা.) বিভিন্ন সময় সাহাবায়ে কিরামকে বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন, বিভিন্ন অসিয়ত করেছেন। একটি সুন্দর ও পবিত্র জীবন গড়ার জন্য যেগুলো জানা আবশ্যক।
কাব ইবনে উজরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, “হে কাব ইবনে উজরা! আমার পরে যেসব নেতার উদয় হবে আমি তাদের (অনিষ্ট) থেকে তোমার জন্য আল্লাহ তাআলার সহায়তা প্রার্থনা করি।
যে ব্যক্তি তাদের দ্বারস্থ হলো (সান্নিধ্য লাভ করল), তাদের মিথ্যাকে সত্য বলল এবং তাদের স্বৈরাচার ও জুলুম-নির্যাতনে সহায়তা করল, আমার সঙ্গে ওই ব্যক্তির কোনো সম্পর্ক নেই এবং এ ব্যক্তির সঙ্গে আমারও কোনো সংস্রব নেই। ওই ব্যক্তি ‘কাউসার’ নামক হাউসের ধারে আমার কাছে আসতে পারবে না। অন্যদিকে যে ব্যক্তি তাদের দ্বারস্থ হলো (তাদের কোনো পদ গ্রহণ করল) কিন্তু তাদের মিথ্যাকে সত্য বলে মানল না এবং তাদের স্বৈরাচার ও জুলুম-নির্যাতনে সহায়তা করল না, আমার সঙ্গে এ ব্যক্তির সম্পর্ক রয়েছে এবং এ ব্যক্তির সঙ্গে আমারও সম্পর্ক রয়েছে। শিগগির সে ‘কাউসার’ নামক হাউসের কাছে আমার সঙ্গে দেখা করবে।
হে কাব ইবনে উজরা! নামাজ হলো (মুক্তির) সনদ, রোজা হলো মজবুত ঢাল (জাহান্নামের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক) এবং সদকা (জাকাত বা দান-খয়রাত) গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেয়, যেভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। ” (তিরমিজি, হাদিস : ৬১৪)
উপরোক্ত হাদিসে রাসুল (সা.) কাব ইবনে উজরা (রা.)-কে কয়েকটি অসিয়ত করেছেন। নিম্নে সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।
জালিমদের সহযোগিতা নয় : কোনো জালিম নেতাকে তার জুলুম-নির্যাতনে সহযোগিতা করা যাবে না। তাদের দরবারে গিয়ে তেলবাজি করা যাবে না। কারণ যারা তেলবাজ তারাই নেতাদের পাশে থেকে, তাদের সব অসংলগ্ন কাজকে সমর্থন ও উৎসাহ দেয়। তাদের মিথ্যাচারগুলোকে সত্য বলে প্রচার করে। যারা এমনটি করবে, তাদের সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। তারা হাউসে কাউসারের কাছেও যেতে পারবে না। তবে প্রয়োজনে তাদের কাছে যাওয়া যাবে। তাদের দল থেকে পদ-পদবিও নেওয়া যাবে। কিন্তু তাদের কোনো মিথ্যাচারে সহায়তা করা যাবে না।
নামাজে গুরুত্ব দাও : এরপর রাসুল (সা.) নামাজের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘নামাজ হলো মুক্তির সনদ। ’ অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, নামাজ জান্নাতের চাবি। (তিরমিজি, হাদিস : ৪)। তাই আমাদের মধ্যে যারা মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে চায়, জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে চায়, তাদের অবশ্যই রাসুল (সা.)-এর এই অসিয়তটির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
রোজা রাখো : রাসুল (সা.)-এর আরেকটি অসিয়ত ছিল রোজা রাখার ব্যাপারে। রোজা ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের একটি। পাশাপাশি এটি আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে ঢালস্বরূপ কাজ করবে। আবু উমামা বাহিলি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাকে এমন একটি ইবাদতের নির্দেশ দিন, যা দ্বারা আল্লাহ আমার উপকার করবেন। তিনি বললেন, ‘তুমি রোজাকে আঁকড়ে ধরো, যেহেতু এর কোনো বিকল্প নেই। ’ (নাসায়ি, হাদিস : ২২২১)
সদকা করো : সদকা (জাকাত বা দান-খায়রাত) গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেয়, যেভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। ফলে এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ বান্দাকে বিপদাপদ, অপমৃত্যু ইত্যাদি থেকে রক্ষা করেন। রিজিকে বরকত বয়ে আনে। তাই আমরা সব সময় সামর্থ্য অনুযায়ী দান-সদকা করতে পারি। এতে আমাদের জীবনে যেমন শান্তি আসবে, তেমনি আমাদের আশপাশের গরিব মানুষগুলোও সুখে থাকবে।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রাসুল (সা.)-এর অসিয়তগুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন।