126 বার পঠিত
দেশে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে লিটারে ৩৪ থেকে ৪৬ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। হুট করে এত বেশি দাম বাড়ানোর চাপ অর্থনীতি নিতে পারবে না বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম। তিনি বলেছেন, দাম কিছুটা বাড়ানো হবে, এই আশঙ্কা ছিল। তবে সেটা সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেত। যতটা বাড়ানো হয়েছে, তা চিন্তার বাইরে।
আজ শুক্রবার রাতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এখন থেকে ডিজেলের দাম হবে ১১৪ টাকা লিটার, যা এত দিন ৮০ টাকা ছিল। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৪ টাকা। কেরোসিনের দামও একই হারে বাড়ানো হয়েছে। নতুন দর ডিজেলের সমান, অর্থাৎ ১১৪ টাকা লিটার। সাধারণত, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম সমান হয়।বাড়ানো হয়েছে পেট্রল ও অকটেনের দামও। পেট্রলের নতুন দাম ১৩০ টাকা, যা এত দিন ৮৬ টাকা ছিল। এ ক্ষেত্রে দাম বেড়েছে লিটারে ৪৪ টাকা। অকটেনের দাম বাড়ানো হয়েছে লিটারে ৪৬ টাকা। এত দিন অকটেন ৮৯ টাকা লিটার বিক্রি হতো। এখন তা ১৩৫ টাকায় বিক্রি হবে।
আজ রাত ১২টার পর থেকেই নতুন এই দাম কার্যকর হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের ইতিহাসে কখনোই জ্বালানি তেলের দাম একসঙ্গে এতটা বাড়ানো হয়নি। এবার ভারতের সঙ্গে দামের পার্থক্য পুরোপুরি দূর করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জ্বালানি তেল খাতে সরকারের ভর্তুকি একবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পদক্ষেপ এটি। সরকার অর্থনৈতিক দিক দিয়ে চাপে পড়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। আইএমএফের ঋণের শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো জ্বালানি খাতে ভর্তুকি প্রত্যাহার। জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে সেই শর্ত পূরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।সরকার এর আগে গত নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়েছিল। তখন দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮০ টাকা লিটার। ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর বাসভাড়া বাড়ানো হয় প্রায় ২৭ শতাংশ, যা তেলের দাম বাড়ানোর হারের চেয়ে অনেক বেশি। একই ভাবে তখন লঞ্চভাড়া বাড়ানো হয় ৩৫ শতাংশ।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। বিবৃতিতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, জনবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় আমজনতার স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। যত দিন সম্ভব ছিল, তত দিন সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির চিন্তা করেনি। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা নিরুপায় হয়েই দাম কিছুটা সমন্বয়ে যেতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে সরকার জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে দিয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের দাম পুনর্বিবেচনা করা হবে।জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে দেশে দাম কম থাকায় তেল পাচারের আশঙ্কার কথাও উল্লেখ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ভারতের কলকাতায় ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১৪ টাকা। পেট্রলের দাম ১৩০ টাকা। দেশে দাম কম থাকায় তেল পাচার হওয়ার আশঙ্কা থেকেও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি সময়ের দাবি।
এ বিষয়ে ম. তামিম বলেছেন, ভারতের সঙ্গে দামের পার্থক্য সব সময় ছিল। এখন পাচারের প্রশ্ন তোলা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিপিসি গত ছয় মাসে (ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই) জ্বালানি তেল বিক্রি করে ৮ হাজার ১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে।
অধ্যাপক ম. তামিম বলেছেন, ডিজেলের দাম বিশ্ববাজারে ব্যারেলে ১৭০ ডলার থেকে নেমে ১৩০ ডলারে নেমেছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমে ১০০ ডলারের মধ্যে এসেছে। এই দর এ বছর ৭০ থেকে ৮০ ডলারে নামতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। এমন সময় হুট করে এত বেশি দাম বাড়ানোর চাপ অর্থনীতি নিতে পারবে বলে মনে হয় না।