173 বার পঠিত
আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। শিশু থেকে যুবক হয়ে তারা সমাজ বিনির্মানে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে চাকরির বাজার খুবই প্রতিযোগিতামূলক। প্রতিটি পদে হাজার হাজার আবেদনকারী থাকে। এদেশে প্রতিনিয়ত শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, শিক্ষিতের পাশাপাশি বেকার তরুণ তরুণী ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষিত মানুষ তাদের দক্ষতা অনুযায়ী চাকরি পায় না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ৪.২ শতাংশ (২৭ লাখ) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবছর দেশে কমপক্ষে নতুন ১ লাখ বেকার বাড়ছে। উল্লেখ্য, শিক্ষা জীবন শেষ করে তাদের নামের সাথে যুক্ত হচ্ছে বেকার ট্যাগ। অশিক্ষিতদের তুলনায় শিক্ষিতদের বেকারত্ব হার তিন গুণ বেশি। কারণ অশিক্ষিত মানুষ যে কোনো পেশার সাথে যুক্ত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। কিন্তু শিক্ষিত মানুষ সবারই উদ্দেশ্য একটাই চাকরি। দেশে চাকরির পদের তুলনায় শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা হুহু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সম্প্রতি দেখা গেছে রেললাইনের ঝাড়ুদার পদে অধিকাংশ চাকরি প্রত্যাশী ছিল মাস্টার্স পাস করা। দেশের এই শিক্ষা ব্যবস্থা ও শ্রমবাজারের চাহিদার মাঝে রয়েছে লক্ষণীয় ভারসাম্যহীনতা। বাংলাদেশের শিক্ষা পদ্ধতিতে মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। কিন্তু বাংলাদেশের শ্রমবাজারে এসব বিষয়ে শিক্ষিতদের জন্য কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। কারণ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পড়ে অনেকের স্বপ্ন ও উদ্দেশ্য থাকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। কিন্ত তারা ইদানীং বিসিএস পরীক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এতে চাকরির বাজারে ভারসাম্যহীন হয়ে গেছে। মানবিক শাখায় পড়ে বিজ্ঞান বিভাগের পদে চাকরি করতে পারছে না। বরং বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রী মানবিক বিভাগের জায়গা দখল করছে। একারণে শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে।
কিন্তু একটি দেশের জনসংখ্যা অভিশাপ নয়, বরং মানবসম্পদ। তবে বাংলাদেশে মানবসম্পদের যথাযথ ব্যবহার করা হয় না। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যদি শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের দক্ষতা তৈরিতে সক্ষম হতো তাহলে এই ভারসাম্যহীনতা তৈরি হতো না। অথচ দেশের বেশির ভাগ সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ শ্রমিকের সংকটে ভুগছে। আর দুর্নীতির কবলে এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত দেখা যায়। সরকারি সব চাকরির (ক্যাডার পদ বাদে) আবেদন ফি ২০২৩ সালে পুনরায় নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরির জন্য এই ফি প্রযোজ্য হবে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ৯ম গ্রেড বা এর বেশি গ্রেডভুক্ত (নন–ক্যাডার) পদে আবেদন ফি ৬০০ টাকা, ১০ম গ্রেডের পদে আবেদন ফি ৫০০ টাকা, ১১ থেকে ১২তম গ্রেডের জন্য ৩০০ টাকা, ১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডের জন্য ২০০ টাকা এবং ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডের জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সম্প্রতি প্রকাশিত পেট্রোবাংলার সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) পদের আসন সংখ্যা ছিল ১১৮ জন। এতে আবেদন করে ৭৪০৭৩ জন। প্রত্যকের জন্য আবেদন ফি ৬৬৯ টাকা। কিন্তু কম্পিউটার দোকান থেকে আবেদন করলে আরো অতিরিক্ত টাকা লাগে। চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে আবেদন ফি তুলনামূলক অনেক বেশি। এই চাকরির পরীক্ষা চলাকালীন দায়িত্ব পালন করে পরীক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক, কর্মচারী। তারা চাকরির সূত্রে মাসিক বেতন পেয়ে থাকে। অধিকন্তু চাকরি প্রত্যাশীর আবেদন ফি থেকে তাদের ভাগ দেওয়া হয়। যেখানে একজন শিক্ষিত বেকার চাকরির জন্য পরীক্ষা দিচ্ছে, সেখানে তাদের থেকে ফি নিয়ে চাকরিজীবীদের দেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য পেট্রোবাংলার আবেদন ফি থেকে জমাকৃত টাকার পরিমাণ ৪ কোটি ৯৫ লক্ষ ৫৪ হাজার ৮৩৭ টাকা। যা দিয়ে ১১৮ জনকে ২২০০০ টাকা করে ১৯ বছর বেতন দেয়া যাবে।
এছাড়া অধিকাংশ চাকরির পরীক্ষা রাজধানী ঢাকায় হয়। এতে প্রান্তিক অঞ্চলের পরীক্ষার্থীদের ঢাকাতে আসতে হয়। এতে বাস, ট্রেনে যাতায়াত করতে আরো খরচ হয়। দীর্ঘ সময় জার্নি করে অনেকে ক্লান্ত হয়ে যায়। তবে তাদের পরীক্ষার কেন্দ্র চিনতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক পরীক্ষার্থী সময়মত পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারে না। সুতরাং চাকরি প্রত্যাশী সকল মানুষের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে চাকরির আবেদন ফি হ্রাস করা।