191 বার পঠিত
বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’। ঘূর্ণিঝড়টি আজ রাত ১০টা থেকে আগামীকাল সকাল ১০টার মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চল অতিক্রম করতে পারে। এজন্য সদরঘাট থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সকালে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত জারি করার জন্য উপকূলীয় অঞ্চলে সকালেই লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি আমরা। কিন্তু সদরঘাট থেকে চাঁদপুরে লঞ্চ চলছিল। বিকেল ৩টা থেকে সেটাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে।
এদিকে এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের গতিপথ, গতি প্রকৃতি ও চরিত্র বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি আজ রাত ১০টা থেকে সকাল ১০টার মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে আমরা ১০টি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছি। জেলাগুলো হচ্ছে- পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর।
তিনি বলেন, আমাদের সর্বশেষ যে পর্যবেক্ষণ, সেখানে আমরা দেখছি এটা প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আঘাত হানতে পারে। আমাদের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। আমরা অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আশা করছি রাত ৮টার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গার মানুষগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারব। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব থেকে রক্ষা করতে ১০টি জেলার ১৫ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে মন্ত্রণালয়।
তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যুর হার আমরা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে পেরেছি। কাজেই আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছি না।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪৫ কিলোমিটার পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১০ কিলোমিটার পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার সকাল থেকে দুপুর নাগাদ ভোলার নিকট দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে অতিক্রম করতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসমূহকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে সাত নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ছয় নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া মোংলা সমুদ্রবন্দরকে পাঁচ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর সাত নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ ফুটের বেশি উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।