96 বার পঠিত
বিদ্যুৎ ও ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সৌর সেচ পাম্প। সেচ পাম্পের জন্য সৌর প্যানেল ব্যবহার করে, এই অঞ্চলের কৃষকরা তাদের জমিতে অর্ধেকেরও কম খরচে সেচ দিতে পারে।
ঠাকুরগাঁও-বালিয়াডাঙ্গী সড়কের আশপাশের জমিতে সোলার প্যানেল ব্যবহার করে সেচের মাধ্যমে বোরো চাষ করতে দেখা গেছে কৃষকদের।
ঠাকুরগাঁওয়ে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সোলার প্যানেল বা সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্প দিয়ে কৃষি জমিতে সেচ দেওয়া। ডিজেল পাম্পের তুলনায় কৃষকরা প্রতি বিঘা ১৫০০-২০০০টাকা খরচ করে সেচ দিতে পারে। শুধু সেচ নয়, ঘরে ঘরে সোলারের ব্যবহারও বাড়ছে
বিদ্যুতের কোনো চাপ নেই, উল্টো সোলারে উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। এ খাতে বড় অবদান রাখছে বলে মনে করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
জেলার ভেলাজান গ্রামের কৃষক খাদেমুল ইসলাম বলেন, আগে যে জমিতে সেচ দেয়া হতো তার দাম ৪ হাজার টাকা, এখন দেড় হাজার টাকা। এতে আমাদের উৎপাদন খরচ কমে যায়। এছাড়া সোলার প্যানেল পরিবেশবান্ধব হওয়ায় কালো ধোঁয়া উৎপন্ন হয় না। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে জমির সেচ নিয়ে চিন্তায় পড়তে হয়েছে। অনেক সময় সেচ ছাড়া ফসল নষ্ট হয়ে যেত। ঋণে ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেক কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। কালের বিবর্তনে সবকিছুই আধুনিক হয়েছে। দেশের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাও আধুনিক করা হয়েছে। এছাড়াও সোলার প্যানেলের ব্যবহার বেড়েছে।
অন্যদিকে বাড়তি কোনো খরচ বা ঝামেলা না থাকায় কৃষকরা সোলারে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। বিদ্যুতের বাড়তি দুশ্চিন্তা পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলেছেন কৃষকরা। হঠাৎ লোডশেডিংয়ের কারণে পানির পাম্প নষ্ট হয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ৪৪ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রায় ১৬২টি সৌর সেচ পাম্প দিয়ে ৭৩৪ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে।
সদর উপজেলার মোলানী গ্রামের বাবু নামের এক কৃষক জানান, সোলারের মাধ্যমে পানি সরবরাহে কোনো সমস্যা নেই। অতিরিক্ত লোকের প্রয়োজন নেই। আগে যখন শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি দিতাম তখন বাড়তি লোক লাগবে। খরচও ছিল বেশি। সেই সঙ্গে শ্যালো দিয়ে পানি তুলতে অনেক শ্রম দিতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখন সোলারের মাধ্যমে জমিতে সেচ দিচ্ছি। এখানে ঝামেলা কম। বর্তমানে সৌর সেচ পাম্প দিয়ে 1 বিঘা জমিতে সেচ দিতে খরচ হয় ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা।
জুলেখা বেগম, মিলন হক, সিকেন্দার আলীসহ কয়েকজন কৃষক জানান, সোলারের কারণে কম খরচে বোরো ধান আবাদ করা হচ্ছে। আগে সিরিয়াল দিয়ে পানি নিতে হতো। এখন ইচ্ছেমতো পানি নেওয়া হচ্ছে। শ্যালো মেশিনে তেল, মেশিন চুরি ও ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। সোলারের কারণে আপনাকে আর এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
এদিকে এসব সোলার প্যানেলের মাধ্যমে জমিতে সেচ দিয়ে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। সেই সঙ্গে তাদের উৎপাদন খরচও কমছে। ফলে বোরো ধান বিক্রি করে অনেক লাভবান হবেন এ জেলার কৃষকরা।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, বোরো মৌসুমে কৃষকরা সোলার প্যানেলের সাহায্যে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। সোলার প্যানেল ব্যবহার করে কৃষকের খরচ এক তৃতীয়াংশ কমেছে। এ কারণে কৃষকের উৎপাদন খরচও কমেছে। এখন কৃষকরা বেশি লাভবান হবেন।