46 বার পঠিত
কুয়াকাটা পটুয়াখালী প্রতিনিধি>কুয়াকাটা, আলিপুর, মহিপুর মৎস্য বন্দর সহ, বাংলাদেশ সামুদ্রিক সকল প্রকার মাছ শিকার না করার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের প্রজনন বাড়াতে ১৯ মে মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়।এ উদ্যোগ সফল করতে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রচার প্রচারণাসহ বিভিন্ন যায়গায় তারা মতবিনিময়ের সভা করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৮মে) দুপরে পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সেখানে বলা হয়েছে, সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের প্রজনন বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ২০২২৩ পর্যন্ত মোট ৬৫ দিন মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।এবং এসময়ে নিবন্ধিত প্রত্যেক জেলেকে ৮০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।
এমন সরকারি নির্দেশ পেয়ে গভীর সমুদ্র থেকে মাছ ধরার সকল সরঞ্জাম তুলে কিনারায় চলে এসেছে হাজার হাজার জেলেরা। তবে সাংবাদিকদের দেখেই অভিযোগ দিতে শুরু করেছে তারা। মলিন মুখে ৬৫ দিনের অবরোধ মেনে নিয়েছে এই অঞ্চলের জেলেরা, তবে ৬৫ দিন কিভাবে সংসার চালাবে এ নিয়ে চিন্তায় পড়েছে শত শত জেলে পরিবার।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কুয়াকাটায় মোট জেলে ১৪০০জন, এরমধ্যে নিবন্ধনকৃত জেলে ১১৫০জন। আলিপুর আনুমানিক জেলে ১৯৫৬ জন, নিবন্ধন জেলে ১৭০০। মহিপুর আনুমানিক জেলে ২২০০ জন, নিবন্ধন জেলে ১৮০০। সরকার তহবিল থেকে যে বরাদ্দ জেলেদের জন্য দেওয়া হয় সেই বরাদ্দ নিবন্ধনকৃত জেলের বাহিরের অন্য কোন জেলেরা ভোগ করতে পারে না, এবং তাদেরকে দেওয়া হয় না। এজন্যই ৬৫ দিনের অবরোধ নিয়ে চিন্তা করছে নিবন্ধনকৃত না হওয়া শত শত জেলেরা ।
গভীর সমুদ্র থেকে ফেরা এফবি জান্নাত ট্রলারের মাঝি কুদ্দুস মিয়া জানান, সাগরে মাছ ধরে টেনেটুনে সংসার চলতাম। অবরোধের কারণে চলে আসতে হলো। কিছু ছেঁড়া জাল রয়েছে। সেগুলো সেলাই করতে ৮-১০ দিন সময় লাগবে। তারপর বেকার সময় পার করতে হবে।
এফবি বন্ধন ট্রলারের মাঝি সরোয়ার জানান, ট্রলারে কাজ করে গত বছর ৮০ হাজার টাকা ঋণী হয়েছি। ওই ঋণ এখনো শোধ করতে পারিনি। ওই ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা সংসার চালাবো কী করে সে চিন্তায় আছি।
মহিপুর, কুয়াকাটা, আলিপুরের নিবন্ধন না হওয়া জেলেরা বলেন, মোগ তো নিবন্ধন নাই, জাগো নিবন্ধন আছে তারাতো সরকারি চাউল পাইবে। সেই চাউল দিয়া তাগো কোনরকম সংসার চলবে। কিন্তু মোরা কি করমু, আমাগো তো কেউ চাউল দেবে না। তাহলে মোগো সংসার কিভাবে চলবে। এমনিতেই ধার-দেনা হইয়া গেছি, কেউ এখন আর ধার দেবে না, মাহাজন তো দূরের কথা।
জেলেদের সংগঠন আশার আলোর সভাপতি নিজাম শেখ জানান, জেলেদের প্রণোদনা বাড়ানোসহ নিষেধাজ্ঞাকালীন গভীর সাগরে প্রশাসনের টহল বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, যারা এখনো সরকারের নিবন্ধনের বাহিরে রয়েছে, তাদেরকে দ্রুত সরকারের নিবন্ধনের আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছি।
কলাপাড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা অপু সাহ জানান, এ সময় কলাপাড়া উপজেলায় নিবন্ধিত ১৮হাজার ৩৫০ জন জেলেকে সরকারের পক্ষ থেকে ৪২ কর্মদিবসের জন্য মোট ৫৬ কেজি চাল ও বাকি ২৩ কর্মদিবসের জন্য মোট ৩০ কেজি চাল প্রদান করা হবে। শুধু মাত্র সাগরে মাছ ধরায় নিষেধ আছে । এ সময় তারা বিভিন্ন নদ নদীতে মাছ ধরতে পারবে।
নৌ পুলিশের বরিশাল অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপার মো. কফিল উদ্দিন বলেন, কঠোর নজরদারি আরোপ করা হয়েছে যেন কোনো জেলে ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যেতে না পারে। এ সকল নৌ পুলিশ স্টেশন সমূহের কাছে সকল ফিশিং বোট ও ট্রলারের তথ্য রয়েছে এবং এই ট্রলারগুলো কোথায় অবস্থান করছে সেদিকেও দৃষ্টি রাখবে নৌ পুলিশ।