110 বার পঠিত
কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী)প্রতিনিধি>বৈশাখ মানেই ভিন্ন সাজে গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি।আকাশে গনগনে সূর্য।কাঠফাটা রোদে তপ্ত বাতাস।এতে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা প্রাণিক’লের। গ্রীষ্মের এই নিষ্প্রাণ রুক্ষতা ছাপিয়ে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে বিভিন্ন খাল-বিল,নদী-নালা,পুকুর-ডোবা ও কাঁদাজলে স্বর্কীয় রূপ ধারণ মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কচুরিপানা ফুল।এ ফুলের নির্মল ও সিগ্ধকর সৌন্দর্য প্রকৃতিতে এনে দিয়েছে ভিন্ন নান্দনিকতা।তপ্ত হৃদয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে প্রাণের সজিবতা।
সাদা,হালকা গোলাপি আর বেগুনি রঙের ফুল দেখলে মনে হবে যেন প্রকৃতির নিখুঁত হাতে আঁকা কোন শিল্পকর্ম।এ ফুলের মুগ্ধতায় প্রকৃতি বা ফুল প্রেমিরা তো বটে ভোতা অনুভ’তি ও পাষাণ হৃদয়ের মানুষ ফুলটির দিকে হুমড়ি পড়ে তাকাচ্ছেন।একদম এড়ানো যাচ্ছেনা এই সৌন্দর্য।চোখ জুড়ানো অপরূপ দৃশ্যে মুগ্ধ হচ্ছেন সৌন্দর্য পিপাসু মানুষও।ছোট কঁচিকাঁচারা এ ফুল তুলে এনে খেলা করছে।সৌন্দর্য বর্ধনে অনেক তরুণী খোপায় বাঁধছেন।
কচুরিপানা শুধু সৌন্দর্যের আধারই নয়,রয়েছে ভেষজ ওষুধি গুন ও বহুবিদ কাজে ব্যবহার,মাছ,গো-খাদ্যের জন্য উৎকৃষ্ট খাবার।সরেজমিনে অন্যান্য জলাশয়ের ন্যায় দেখা যায়,কিশোরগঞ্জ সদর ইউপির রাজিব গ্রামের উপর দিয়ে বহমান সেচ ক্যানেলের ধারের ডোবায় সবুজের বুক চিরে আঁচল পাতিয়ে ফুটেছে হাজার হাজার কচুরিপানা ফুল।যেন শুভ্র আলোয় মিটি মিটি জ্বলছে লক্ষ-কোটি তারা।ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা।
এ মুগ্ধতায় থমকে দাঁড়াচ্ছে পথিক।হরণ করে নিচ্ছে পাষান হৃদয়ের মন।উদাসি করে তুলেছে প্রকৃতিপ্রেমিদের।তারা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে উপভোগ করছেন রাশি রাশি ফুলের সৌরভ।অনেকে এর সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে নিজেকে করছেন ক্যামেরা বন্দি।কিশোরীগঞ্জ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি শিক্ষক জ্যোতি কৃষ্ণ রায় বলেন,কচুরিপানা ফুলের যেমন সৌন্দর্য আছে তেমনি এ উদ্ভিদ বহুবিদ উপকারে আসে।দেশীয় মাছের বংসবিস্তার,খাদ্য,তিব্র তাপদাহ থেকে রক্ষা,গো-খাদ্য,উৎকৃষ্ট জৈব সার,বিভিন্ন অবকাঠামো জমাট বাঁধানোর জন্য পানি ধরে রাখতে,শুকনা কচুরিপানা জ্বালানি,গোয়াল ঘরে বিছানো,ভাসমান কচুরিপানার উপর সবজি ও বীজ তলাসহ নানা বিদ কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে।
উপজেলার আয়ুর্বেদ চিকিৎসক বেলাল হোসেন জানান,কচুরিপানায় আ্যান্টি-ইনফেমেটরি,আ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং আ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে।কচুরিপানা সিদ্ধ,রান্না কিংবা রস যে কোন ভাবে খাওয়া যায়।যা রস বা খাবার শরীরকে শক্তিশালী ও সুস্থ রাখতে,বার্ধক্য রোদ করতে সাহায্য করে।পাশাপাশি ডায়রিয়া,বমি বমি ভাব,পেট ফাঁপা,গলা ব্যথা-ফোলা,কানের সমস্যা,নতুন মায়েদের স্তনের দুধের পরিমান বদ্ধিতে,অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যাসহ এসব রোগ নিরাময়ে রয়েছে দারুন কার্যকারিতা।কিন্তু আধুনিক চিকিৎসার ভিড়ে এ ভেষজ চিকিসা হারিয়ে যাচ্ছে।রাজিব ক্যানেল পাড়ের বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম রাশেদ বলেন,গ্রাম-বাংলার অতি পরিচিত একটি জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা।তার মধ্যে যে ফুল ফোটে,তা দেখতে সত্যি মনোমুগ্ধকর।
এটা প্রকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে ওঠা এক অবহেলিত প্রাকুতিক শোভা।যা দেখলে হৃদয়-মন হরণ করে নেয় নিমেষেই।ওই ডোবার চোখ জুড়ানো ফুলের নান্দনিকতা সোসালমিডিয়ায় ভাইরাল হলে তা দেখতে আসা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী স্বপ্না শান্তা প্রাঃ বলেন,কচুরিপানা ফুল যে,এত নয়নাভিরাম,মনোমুগ্ধকর,চিত্রাকর্ষক আগে জানতাম না।এখানে এসে আমাকে খুবেই ভাল লাগছে।আর প্রাণ ভরে উপভোগ করছি এ ফুলের মন মাতানো সৌরভ।উপজেলা কৃষি অফিসার লোকমান আলম বলেন,জলজ কন্যা পদ্মের ন্যায় কচুরিপানা বিভিন্ন বিল-ঝিলে ফুটে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে।শুধু সৌন্দর্যই নয়,কচুরিপানা জৈব সার,ভাসমান পদ্ধতি সবজি চাষ,গো-খাদ্যের চাহিদা মেটানোসহ নানাবিদ কাজে ব্যবহার করে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।