স্বপ্ন তো সেটাই যেটা আমরা একটু একটু করে জয় করে নিতে পারি। আর শখ তো সেটা যেটা আমরা মন থেকেই ভালোবাসি। আমরা আসলে সবসময় আমাদের শখের সামনে এগিয়ে যেতে থাকি আর স্বপ্নের পিছনে পড়ে থাকি। তাই স্বপ্নকে পূরন করতে না পারলেও শখ কে ঠিকই বাস্তবায়ন করার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে থাকি। এমনি এক তরুন তার শখ কে কিভাবে স্বপ্নে বাস্তবায়ন করেছে সেই গল্প ই জানাতে চাই আপনাদের।
সময়টা খুব বেশিদিন আগের না। সালটা ২০১৯, কাউসার আহমেদ রোহান নামের এক সাধারন তরুন এর মাথায় হঠাৎ ই নিছক শখ জাগে ফটোগ্রাফি নিয়ে কাজ করার। ইউ ল্যাব ইউনিভার্সিটির এই তরুন কিন্তুু ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ডিপার্টমেন্ট এর আাওতাধীন জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ নিয়ে পড়ালেখা করেন স্নাতক চতুর্থ বর্ষে। ওই যে বল্লাম নিছক ই শখ, হ্যা মনের ভালো লাগা থেকে শখের বসেই এ কাজের সাথে নিজেকে দিব্যি সংযুক্ত করে নিলেন এই তরুন। কলেজে জীবনে অধ্যয়নরত থাকাকালীন সময়েই মূলত তরুন রোহান এর মাথায় শখের বসে এই কাজ করার আগ্রহ জাগে। তার পরিপ্রেক্ষিতে বাবার কাছে ক্যামেরা আবদার করেন তিনি। ২ ভাই ১ বোনের মধ্যে বড় সন্তান ছিলেন রোহান। স্বভাবতই আদরের ক্ষেত্রে কোন ভাটা পরার অবকাশ ছিলো না। আর তাই ব্যাবসায়ী বাবা ও সন্তানের ইচ্ছা পূরণ করে দিলেন। রোহানের আজকের সেরা ফটোগ্রাফার হয়ে ওঠার হাতেখড়ি ও শুরু হতে লাগলো সেই ক্যামেরা দিয়েই। এলাকার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের ছেলে হওয়া সত্বেও অন্যের ছবি তোলার বিষয়টিকে নিয়ে রোহান এর পিতামাতার তেমন কোন আপত্তি ছিলো না বলেই জানালেন তিনি।
যাত্রা শুরুর পথযাত্রী রোহান একাই ছিলো, আর শখ পূর্ন করার সঙ্গী ছিলো তার একমাত্র অবলম্বন সনি ক্যামেরা ও একটি লেন্স। শুরুটা হয়েছিলো আশেপাশের পরিচিত ও অল্প পরিচিত বন্ধুদের বিয়ের ছবি তুলে দেওয়ার মাধ্যমে। সময় যতো বাড়তে থাকলো রোহানের এ শখের প্রতি তীব্র থেকে তীব্রতর নেশা জাগ্রত হতে থাকলো। আর এই তীব্র আকাঙ্ক্ষাই ধীরে ধীরে তার স্বপ্নের দিকে তাকে নিয়ে আসতে লাগলো। তার ক্ষুদ্র শখটাই যেন আজ তার ভালো লাগার প্রিয় কাজ হিসাবে পরিগনিত হচ্ছে। আর সকল মানুষের মনের প্রশংসা কুড়াচ্ছেন তিনি তার এই শৈল্পিক কাজের মাধ্যমে। এবার আসা যাক যে একা একটি ক্যামেরা আর একটি লেন্স দিয়ে এতো ভালো মানের কাজ করার জন্য আর্থিক সহযোগিতা তিনি কোথা থেকে পেতেন বা রোহান এর কাজ গুলো করার জন্য আর্থিক উৎস কি ছিলো। এমন প্রশ্নের জবাবে রোহান জানান যে প্রথম দিকে বাবা সাপোর্ট দিতো
পরে নিজেই ছোটখাটো ইভেন্ট করে নিজের খরচ চালাতেন। তখন ও পর্যন্ত তিনি একাই পুরো বিষয়টাকে সামলাতেন। আস্তে আস্তে যখন এই তরুন নিজ উদ্যমে কিছুটা সাবলম্বী হয়ে ওঠছিলো তখন তার সাথে এসে দুই একজন পরিচিত মুখচেনা মানুষেরা তার সহযোগী হিসাবে কাজ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলো। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি দারুন সাফল্য লাভ করতে শুরু করলেন আর আশেপাশের ছোট গন্ডি ছাড়িয়েও অন্য জায়গায় নিজের সুনাম ছড়াতে সক্ষম হোন। এক কথায় বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যযনকারী আর পাচটা সাধারন ছেলের মতো দেখতে হলেও নিজের স্বকীয় কর্মদক্ষতায় একজন অসাধারন তরুন উদ্যক্তার তালিকায় নিজের নামটি লিখান।
মানুষের প্রতিটা গল্পের পিছনেও যে গল্প থাকে তা বের করার ইচ্ছা আর জীবনের ছোট ছোট মুহুর্ত যেগুলা আসলে বাহ্যদৃষ্টিতে দেতে পাওয়া যায়না সেই সুন্দর সুন্দর সময়গুলো কেই ক্যামেরাবন্দী করার জন্যই তিনি তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন তার ফিল্মিইজম ওয়েডিং। এই ফিল্মিইজম ওয়েডিং এর নামকরন ও তিনি নিজেই করেছেন। এই ওয়েডিং কাজের মাধ্যমে তিনি প্রথমে ছোট ছোট কিছু ইভেন্ট করতে থাকে। তারপরে তিনি নেটিজেনদের প্রোগ্রাম এর পাশাপাশি অন্যান্য বিভিন্ন জায়গায় বিশেষত টিভিসি এড গুলোতে ও কাজ করার সুযোগ পেয়ে যায়। এইভাবেই মূলত একটানা কাজ করতে করতে তার অভিঙ্গতার ঝুলি যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছিলো বিপরীতে তার কাজ সম্পর্কে মানুষের ধারনা, দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিবর্তন হতে লাগলো।
এতো সবের মধ্যে বিস্ময়কর বিষয়টি হলো যে সময়ে তরুন রোহান এর মনে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন জাগলো সেই সময় চাকরির বাজারে মন্দাময় অবস্থা বিরাজমান ছিলো। সমস্ত পৃথিবী করোনার ভয়াল থাবার আক্রমনে আগ্রাসি ছিলো। প্রতিটি দেশের মতোই বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্হা ও স্তিমিত ছিলো। আর সেই সময়টাকেই কাজে লাগিয়েছে রোহান। এই ওয়েডিং নিয়ে তার ভবিতব্য পরিকল্পনা জানতে চাইলে রোহান বলেন তিনি দেশ এর সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ও নিজেকে আবিষ্কার করতে চান, এবং তিনি যথেষ্ট আশাবাদী যে তার এই সামান্য অথচ আনন্দদায়ক কাজটির মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারবেন। পাশাপাশি তার স্ব প্রতিষ্ঠিত ফিল্মিজম ওয়েডিং ও আরো দূর বহুদূর পর্যন্ত কাজের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করতে পারবে। তার এই মনের ইচ্ছাকে আমরাও সাধুবাদ জানাই হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে। বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের একজন উদীয়মান তরুন উদ্যোক্তা হিসাবে তার জন্য অসংখ্য শুভকামনা।