99 বার পঠিত
ইবি প্রতিনিধি>ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা কঠোরভাবে দমন করছেন বর্তমান কমিটির ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত ও সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় । তাদের নেতৃত্বে গত এক বছরে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অনাকাঙ্খিত ঘটনা নেই বললেই চলে। কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলেও তা দমন করা হয়েছে কঠোরভাবে। তাছাড়া সভাপতি ও সম্পাদকের ভাতৃত্ব প্রশংসা করার মতো, সারাক্ষণ একসাথে ঘুরাঘুরি, শিক্ষার্থীদের খোঁজ খবর নেওয়া থেকে দাবি আদায়ে একসাথে রাজপথে থাকেন ।
ইবিতে বছর পাঁচেক আগেও ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্তৃত্ব ছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একমাত্র ভ্রাতৃপ্রতীম বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইবি শাখা ছাত্রলীগের তত্ত্বাবধানে কেম্পাস থেকে বিতাড়িত আছে বিরোধী দলীয় ছাত্র সংগঠনগুলো। তবে এ ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন নিয়ে সারাদেশে আলোচনা সমালোচনা হলেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাসে এক অনন্য অবস্থান ধরে রেখেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
ইবি শাখা ছাত্রলীগ বলে প্রশংসা কুড়াবে অতীতের নেতাকর্মীরা বিষয়টা সেরকম কিছু না। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। কুষ্টিয়া শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এ বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রলীগ রাজনীতির ইতিহাস সুখকর ছিল না। শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব শাহজাহান আলম সাজুর দীর্ঘ সংগ্রাম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৮৯ সালে ছাত্রলীগ আবির্ভাব হয় এ কেম্পাসে , কিন্ত পর্যায়ক্রমে বিএনপি ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের আধিপত্যে ছাত্রলীগের কোণঠাসা অবস্থা ছিল দীর্ঘকাল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হওয়ায় এবং এ সরকার লাগাতার তিন মেয়াদে ক্ষমতাসীন হওয়ায় কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে পায় ইবি শাখা ছাত্রলীগ। কিন্তু নিজেদের মাঝে কোন্দলের কারণে অনেক সময় বিতর্কিত হয়েছে ইবি শাখা ছাত্রলীগ। যার দরুণ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ কর্তৃক সম্মেলনের আগেই বিলুপ্ত হয়েছে কয়েকটি কমিটি। কিন্তু সকল ইতিহাস থেকে আলোচনা ও সমালোচনার অবসান ঘটিয়ে প্রশংসিত বর্তমান কমিটির নেতাকর্মীরা । বর্তমান কমিটির পর থেকে কেম্পাসে সহিংসতা নেই বললেই চলে সাম্প্রতিক সময়ে নেতাকর্মীদের কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও ছাত্রলীগ কঠোরভাবে দমন করেছে এমনকি ঘটনায় জড়িত থাকলে ছাত্রলীগ থেকে আজীবন বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটেছে।
গতবছর ইবি শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল ৩১ জুলাই ২০২২ । সেখান আইন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতকে সভাপতি এবং অর্থনীতি বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের নাসিম আহমেদকে জয় সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়েছিল। তারপর থেকে ইবি শাখা ছাত্রলীগ চলছে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে। পূর্বে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাইফুল ইসলাম সভাপতি ও অমিত কুমার দাস সাধারণ সম্পাদক । এরপর ২০১৭ সালের ১৫ এপ্রিল শাহিনুর রহমান শাহিনকে সভাপতি ও জুয়েল রানা হালিমকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ । পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই রবিউল ইসলাম পলাশকে সভাপতি ও রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। এর তিন মাসের মাথায় সম্পাদক রাকিবের পদ পেতে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়। তারপর থেকে ভরাডুবি চলতে থাকে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে। বর্তমান শাখা ছাত্রলীগ কমিটির পর থেকে এখন ঐক্যবদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
তবে শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তথ্যসূত্র বলছে, এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি না দেওয়ায় কিছু নেতাকর্মীদের মাঝে পদ প্রত্যাশার আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়েছে। আগামী নির্বাচনের পূর্বেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে বলে আশা রাখছেন নেতাকর্মীরা।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এক বক্তব্যে বলেছিলেন, বাংলাদেশর ঐতিহ্য মাথায় রেখে জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের নেতাকর্মীরা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে । তিনি আরো বলেছিলেন জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখিয়েছিলেন সততা এবং আদর্শের পাশাপাশি লক্ষ্য স্থির থাকলে যেকোন অর্জনই সম্ভব। আমরা জাতীর পিতার আদর্শ অনুসারে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি।
আসলে ছাত্রলীগের ইতিহাসটা প্রশংসনীয়, শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতি এই তিন মূলমন্ত্র নিয়ে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল প্রাঙ্গণ থেকে যাত্রা শুরু করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। ১৪ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে গঠিত সংগঠনটি সময়ের পরিক্রমায় পরিচিতি পায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হিসেবে। দীর্ঘ সময়ের পথচলায় সংগঠনটি বিভিন্ন ইতিহাসের অংশ হয়েছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলনে ছাত্রলীগ অবিস্মরণীয় অবদান রাখে। এরপর উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৮৩ সালের শিক্ষা আন্দোলন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের সহায়তা, বন্যার সময় দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে ছাত্রলীগ।