83 বার পঠিত
আজ “বাঙ্গালি জাতির মুক্তির সনদ” ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। ১৯৬৬ সালের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি উপস্থাপন করেন।
এই ৬ দফা দাবী ই বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। ৬ দফা আন্দোলন পাকিস্তানী শক্তিকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ৬ দফা দাবি উপস্থাপনের পর দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গী, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে শফিক, শামসুল হক, মনু মিয়াসহ ১০জন বাঙালি শহীদ হন। এর মধ্য দিয়ে দেশের আনাচে-কানাচে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ছয় দফা আন্দোলন। “ছয় দফা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘সাঁকো দিলাম, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য’। বস্তুত ছয় দফা ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজমন্ত্র তথা অঙ্কুর।”
বাঙ্গালি জাতির মুক্তির সনদ ৬ দফা দাবীগুলো নিম্নরূপ:
প্রথম দফাঃ পাকিস্তানের সরকার হবে যুক্তরাষ্ট্রীয় এবং সংসদীয়। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভা প্রত্যক্ষ ও সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত হবে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় আইনসভার প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে।
দ্বিতীয় দফাঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের হাতে থাকবে কেবলমাত্র দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্র সংক্রান্ত বিষয়াদি।
তৃতীয় দফাঃ দেশের দুটি অঞ্চলের জন্য দুটি পৃথক অথচ সহজেই বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। এক্ষেত্রে দুই অঞ্চলে একক মুদ্রাও থাকতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে ফেডারেল ব্যাংককে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থ দফাঃ রাজস্ব সংক্রান্ত নীতি-নির্ধারণের দায়িত্ব এবং কর ধার্যের ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারগুলোর থাকবে। দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় পরিচালনার জন্য আদায় করা রাজস্বের অংশবিশেষ কেন্দ্রীয় সরকারকে দেওয়া হবে।
পঞ্চম দফাঃ বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুই অঞ্চলের জন্য পৃথক হিসাব রাখতে হবে। প্রাদেশিক সরকারগুলো বিদেশের সঙ্গে বৈদেশিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাণিজ্যিক চুক্তি করতে পারবে।
ষষ্ঠ দফাঃ কার্যকরভাবে জাতীয় নিরাপত্তায় অংশগ্রহণের জন্য প্রদেশগুলোকে প্যারামিলিশিয়া বা আধা-সামরিক বাহিনী গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হবে।
পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ-বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি পেশ করেন। ৬ দফা দাবী পেশের কারনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দেওয়া হয় । কিন্তু বাঙ্গালি থেমে থাকেনি। সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে আন্দোলন করে জাতির জনককে মুক্ত করে। ছয় দফা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচন । নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে আওয়ামীলীগ। ‘৭০-এর নির্বাচনের পরে আসে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত পর্যায় ‘৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। ৩০ লক্ষ বাঙালির আত্মদান, ২ লাখ বাঙালি মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” নামের রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাঙালি জাতির স্বাধিকার, স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক মর্যাদা পায় ছয় দফা।